স্বাদে নামিদামি রেস্তোরাঁকেও টেক্কা দেয় কলকাতার পাইস হোটেলগুলো
ধৃমল দত্ত, কলকাতা: কলকাতায় নামকরা বড় বড় রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়েই যদি আপনি মনে করেন, বাঙ্গালি খাবারের পূর্ণ স্বাদ নিয়ে ফেলেছেন, তাহলে বড্ড ভুল হচ্ছে। যতক্ষণ প্রাচীন এ শহরের অলিগলিতে, ফুটপাতের ওপর গড়ে ওঠা ছোট ছোট পাইস হোটেলগুলোর খাবার খেয়ে দেখছেন, ততক্ষণ কলকাতার বাঙ্গালিয়ানা স্বাদের পূর্ণতা অধরাই থেকে যাবে।
খাদ্যরসিক বাঙালির কলকাতা শহরজুড়ে বিভিন্ন রাস্তার ধারে মোড়ে মোড়ে খাবারের দোকানের দৃশ্য যাদের চোখে পড়েছে, তারাই জানেন এর মহিমা। রোজ অফিসে যাওয়া-আসার পথে এসব পাইস হোটেলই ভরসা স্বল্পআয়ের মানুষের। বছরের পর বছর ধরে কম খরচে কলকাতাবাসীর জিহ্বার স্বাদ মেটানোর পাশাপাশি পেট ভরাচ্ছে হোটেলগুলো। তাই তো কলকাতার পাইস হোটেলের নামডাক আজ সবখানে।
প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক শহরেরই কিছু নিজস্বতা থাকে। কলকাতার অন্যতম বিশেষত্ব খাওয়া-দাওয়ায়। শুধু ভারত নয়, বিদেশের মান্যগণ্য ব্যক্তি এবং পর্যটকরাও এ শহরের ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা পাইস হোটেলের খাবার খেয়ে দেখেছেন এবং তারিফও করেছেন দরাজ গলায়।
কলকাতা ব্যাঙ্কশাল কোর্টের ধারে ফুটপাতের দোকানের খাবারের স্বাদ প্রায়ই নিয়ে থাকেন আদালতে আসা মানুষজন।
কী কী খাবার পাওয়া যায়? নিজের মুখেই জানালেন দোকানি, ‘এখানে লাচ্ছা পরোটা, রুমালি রুটি, চিকেন বিরিয়ানি, মাটন বিরিয়ানি, আলুর দম, চানা মশলা, চিকেন চাপ, চিকেন কষা, মাটন কষা পাওয়া যায়। ভাত, ডাল, মাছ, সবজি এগুলো তো রয়েছেই।’
একই দোকানে সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে বাহারি পদের সুস্বাদু সব খাবার। পাইস হোটেলটিতে খেতে আসা সুজিত বিশ্বাস বলেন, ‘খুবই ভালো খাবার। এটি অফিসপাড়া নামে পরিচিত। এখানে খুব কম টাকায় ভালো খাবার পাওয়া যায়। আগের দিনের বাসি খাবার দেওয়া হয় না, রোজকার খাবার রোজ তৈরি হয়। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসে। এখানে এত ভিড় হয় যে, খাবার বেঁচে থাকে না। সব খাবার টাটকা, তাই শরীরও খারাপ হয় না। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে দামটা। খুব কম অল্প পয়সায় পেট ভরে খাবার পাওয়া যায়। মোটের ওপরে সবদিক থেকেই ভালো এই হোটেল।’
পাইস হোটেলগুলোতে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁগুলোর মতো মেন্যু কার্ড থাকে না। হোটেলের ওয়েটার বা খোদ মালিকের মুখ থেকে শুনেই অর্ডার দিতে হয়। একেকজনের একেক টেবিলের বিলাসিতাও নেই এখানে। ফলে অন্য কেউ আপনার টেবিলে এসে বসে গেলে অবাক হবেন না। এসব হোটেলে এগুলো খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
কলকাতার রাস্তার পাশের হোটেলগুলোর নাম পাইস হোটেল কীভাবে হলো সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে শোনা যায়, একসময় এখানে এক পয়সায় পেটভরে খাওয়া যেতো। সেই পয়সা থেকেই পাইস নামকরণ।
তবে নামের উৎস যা-ই হোক, পাইস হোটেলগুলোর খাবারের স্বাদ আপনাকে বাড়ির রান্নার কথা মনে করিয়ে দেবে। আগের মতো কয়েক পয়সায় খাবার না মিললেও বেশিরভাগ জায়গায় অতিরিক্ত ভাত, ডাল, লেবু এখনো বিনামূল্যেই পাওয়া যায়।
কেএএ/জেআইএম