আদানি গ্রুপের ‘কেলেঙ্কারি’
ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে
ভারত বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের এরই মধ্যে আকৃষ্ট করেছে। উদীয়মান বাজার অর্থনীতির জন্য শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বিনিয়োগের কিছু ঝুঁকি আগে থেকেই ছিল। তন্মধ্যে ধর্মঘট, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সাইবার নিরাপত্তা অন্যতম। এবার যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের শীর্ষ ধনীর বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি’র অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, ভারতীয় পতাকায় শরীর ঢেকে দেশ লুট করছেন গৌতম আদানি। এই খবরে টালমাটাল গৌতম আদানির আর্থিক সাম্রাজ্য।
আরও পড়ুন> হিনডেনবার্গের দাবি/ভারতের পতাকায় শরীর ঢেকে দেশ লুট করছেন আদানি
গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কীভাবে খন্ডন করবে দেশটির সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। কী উপায়ে মোকাবিলা করা হবে এসব প্রতিবন্ধকতা এবং দেশটি কত শিগগির একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ গন্তব্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস, ভারতের অর্থনীতি ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।
আমেরিকান বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সেবা সংস্থা মরগান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদরা আভাস দিচ্ছেন, ২০৩০ সাল শেষ হওয়ার আগে দেশটির স্টক মার্কেট বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কেননা, সম্প্রতি ইসরায়েল থেকে শুরু করে কানাডার ধনাঢ্য ব্যক্তি, পারিবারিক অফিস, পেনশন তহবিল নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ের দিকে ঢালু হচ্ছে। অনেকেই বিনিয়োগের সুযোগ মূল্যায়নের জন্য প্রথম সফরও করছেন।
প্রাইমইনফোবেস ডটকম বলছে, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় শেয়ারের বিদেশি মালিকানা তিনগুণেরও বেশি এবং ৬৮৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিদেশিরা এখন সমস্ত স্টকের এক পঞ্চমাংশের মালিক। যদিও তাদের শেয়ার কিছুটা কমেছে কারণ, দেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।
আরও পড়ুন> হিনডেনবার্গকে জবাব/ আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ‘ভারতের ওপর আক্রমণ’
যারা সক্রিয়ভাবে স্টক বাছাইকারী, পরিচালকদের কাছে তাদের তহবিল অর্পণ করে তারা স্বস্তি বোধ করতে পারে। অনেক স্থানীয় অর্থ ব্যবস্থাপক আদানির সাতটি মূল তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে সরে এসেছেন। ফলে কংগ্লোমারেটের আঁটসাঁট মালিকানা কাঠামো, ভারী ঋণ ও উচ্চ মূল্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
আদানি হিনডেনবার্গ রিসার্চের করা জালিয়াতি এবং স্টক ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ খারিজ করেছেন। তা সত্ত্বেও, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি টোটাল গ্যাস, ফ্রান্সের টোটালএনার্জির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের শেয়ার গত তিনটি ট্রেডিং সেশনে তাদের মূল্যের প্রায় ৪০ শতাংশ হারিয়েছে৷
যারা নিষ্ক্রিয়ভাবে স্টক মার্কেটের সূচক ট্র্যাক করেন, তাদের জন্য বিতর্কে পড়া আদানি, বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি, এরই মধ্যে একটি ব্যয়বহুল বাজার থেকে প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করতে পারেন। তবে এমএসসিআই ইন্ডিয়া ইনডেক্সের কোম্পানিগুলো যেখানে টাইকুন কোম্পানিগুলোর ৫ শতাংশ আছে, তারা উদীয়মান বাজারের বেঞ্চমার্কের জন্য ১২ গুণের তুলনায় বছরের শুরুতে ২১ গুণ আয়ের জন্য গড়ে একাধিক লেনদেন করে।
স্টক রাউটের আগে আদানি গ্রুপের ২৩০ বিলিয়ন ডলার হলো সমন্বিত ইকুইটি মূল্য। ধারণা করা হচ্ছে, কর্মকর্তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন তা বাজারের পরিপক্কতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পাঠাবে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার নতুন চেয়ার মাধবী পুরি বুচ ইতিমধ্যে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলোর কাছে আরও ভালো বাজারের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কড়া বার্তা দিয়েছেন। সাবেক এই ব্যাংকার আদানিকে কীভাবে পরিচালনা করেন তার একটি বড় প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএনআর/জিকেএস