দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানো নিয়ে কী ভাবছে ফ্রান্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বুধবার (২৫ জানুয়ারি) ইউক্রেনে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির এ সিদ্ধান্তের পর ইউরোপের প্রতিবেশী ডজনখানেক দেশ ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। তবে ট্যাংক পাঠানোর সেই তালিকায় এখনো নেই ফ্রান্স। কেন ফ্রান্সের এ নিষ্ক্রিয়তা তা নিয়ে বিশ্লেষণী তুলে ধরেছে দ্য ইকোনমিস্ট।

কয়েক দিন আগে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ফরাসি লেক্লারক ট্যাংক ইউক্রেন যুদ্ধে অবদান রাখবে কি না, তখন তিনি বলেছিলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বছরের শুরুতে জার্মানিকে উদ্বুদ্ধ করতে আগ্রহী ছিল ফ্রান্স। আর তাই জানুয়ারির প্রথম দিকে ঘোষণা করা হয়, তারা ইউক্রেনে ‘হালকা ট্যাংক’ এএমএক্স-১০ আরসি পাঠাবে। যদিও এর আগের মাসেই ম্যাক্রোঁ যুক্তি দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করা দরকার। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগের লাইন খোলাও রেখেছিলেন।

প্রশ্ন উঠছে তাহলে ইউক্রেন নিয়ে ফ্রান্সের কৌশল বা নীতি আসলে কী? ফ্রান্সের অবস্থানের অস্পষ্টতা দুটি জিনিস থেকে বোঝা যায়। একটি হলো রাশিয়ার হামলার আগের কয়েক বছর ম্যাক্রোঁ যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা লক্ষ্য করলে। পুতিনকে আরও ভাল আচরণে আকৃষ্ট করার চেষ্টা এবং তাকে তার বাসভবনে স্বাগত জানানোর আগে, যুদ্ধ ঠেকাতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে মস্কোতে শেষ সফর করেন ম্যাক্রোঁ। এসব ব্যর্থ পদক্ষেপ ফরাসি প্রেসিডেন্টকে এমন একজন নেতা হিসাবে প্রকাশ করে, যিনি পুতিনের যুদ্ধের মোকাবিলা করতে ইচ্ছুক নন।

দ্বিতীয়টি হলো, রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে ম্যাক্রোঁ তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষের সঙ্গে পশ্চিমা নেতাদের চেয়ে বেশি কথা বলেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট শান্তি আলোচনার সম্ভাবনাকে সামনে আনেন। তিনি যুক্তি দেন রাশিয়ার উদ্বেগগুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার। গত বছর তিনি রাশিয়াকে ‘অপমান না করার’ জন্য কৌশলী আচরণ করেন। অনেকের ধারণা, ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনার জন্য চাপ দিতে পারেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্সি স্পষ্টতই এটি অস্বীকার করে আসছে। ম্যাক্রোঁ রাশিয়ার প্রতি তার যোগাযোগের লাইন কঠিন করেছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ম্যাক্রোঁ ঘোষণা করেন, ফ্রান্স ইউক্রেনকে ‘জয়ের সব পথে’ সমর্থন করবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এ পরিবর্তন কিয়েভও লক্ষ্য করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁর বিবৃতি প্রকৃতপক্ষে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রদর্শন করে।’

jagonews24

আজকাল পুতিনের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথোপকথন সতর্কভাবে বিবেচনা করা হয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে এই জুটি আর কথা বলেননি। ইতিমধ্যে, ফ্রান্স ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক সিজার হাউইটজার ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে। এএমএক্স-১০ আরসি শিগগির পাঠানো হবে৷

ম্যাক্রোঁ এখনও আশা করছেন, ফ্রান্স একদিন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতা করতে সাহায্য করবে। তার এই নীতি ব্যাখ্যা করতে পারে, কেন তিনি ইউক্রেনের জন্য ইউরোপের সামরিক সমর্থনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। প্যারিসের বৈদেশিক-নীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে চলে যায় এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে দীর্ঘস্থায়ী ভয়ও থাকতে পারে তার। কিন্তু ফ্রান্সের সম্প্রতি ভারী অস্ত্র সরবরাহ থেকে বোঝা যায় সেই ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছে। ম্যাক্রোঁ হয়তো বলছেন, অন্য ইউক্রেনীয় মিত্ররা কী ভাবছে।

পুতিনের দায়িত্বে কিংবা বা তার দায়িত্ব ছাড়াই রাশিয়া ইউরোপের দোরগোড়ায় থাকবে। ফরাসিদের ভাষ্য হচ্ছে, যুদ্ধ আলোচনার মাধ্যমে শেষ হবে এবং তাদের মহাদেশের নিরাপত্তা ও ন্যাটোর ভবিষ্যত সীমান্তের অবস্থান বিবেচনা করতে হবে। এটা হতে পারে, কিন্তু পরিস্থিতির জটিলতা প্রকাশ করার জন্য ম্যাক্রোঁর আগ্রহ ফ্রান্সের অবস্থানের স্বচ্ছতাকে ক্ষুন্ন করে।

বাস্তবে ফ্রান্স ইউক্রেনের বিষয়ে আমেরিকানদের অবস্থানের কাছাকাছি। যেমনটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ম্যাক্রোঁর ওয়াশিংটন রাষ্ট্রীয় সফরের সময় স্পষ্ট হয়। উভয় দেশই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের প্রতি ম্যাক্রোঁর লাইনটি দরকারি বলে মনে করেন। আমেরিকানরাও জানে ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি। গত ২০ জানুয়ারি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ২০২৪-৩০ এর জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট ৪১৩ বিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ২০১৯-২৫ এর তুলনায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।

ফ্রান্স যদি ইউক্রেনে লেক্লারক ট্যাংক পাঠায়, তবে এটি সম্ভবত একটি কঠিন সিদ্ধান্তের প্রতীকী হয়ে উঠবে। ফরাসি সেনাবাহিনীর কাছে এ ধরনের ২০০টির মতো ট্যাংক রয়েছে।

তবে ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের জন্য তার রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থনকে আগের চেয়ে আরও স্পষ্ট করেছেন। এমনকি ফ্রান্সের নেতৃত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।