জাপানে নিম্মমুখী জন্মহার
দেশের জনসংখ্যা বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান কিশিদার
দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন জন্মহার সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে জাপান। একাধিক সন্তান নিতে প্রণোদনা দেওয়া সত্ত্বেও এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পাচ্ছে না দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশের ক্রমহ্রাসমান জন্মহার মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর আগে দেশের জন্মহার বাড়াতে সরকারের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে বক্তব্য দেন। সেসময় তিনি দেশটির দীর্ঘমেয়াদি এ সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন> জন্মহার বাড়াতে অভিভাবকদের আর্থিক প্রণোদনা বাড়ালো জাপান
কিশিদা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে জন্মহার নিম্নমুখী হওয়ায়, দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনটি চলতে থাকলে আমরা সব দিক থেকে চরম বিপর্যয়ে পড়বো। তাই আর দেরি নয়। জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য যা যা করার দরকার, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।
কিশিদা জানান, তিনি চলতি বছরের জুনের মধ্যে শিশুবিষয়ক সব নীতির জন্য বাজেট দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা জমা দেবেন ও এপ্রিলে বিষয়টি দেখভালের জন্য নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপান নগদ প্রণোদনা ও আরও বেশি সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বেশি বেশি সন্তান নিতে উত্সাহিত করার চেষ্টা করছে। তবে বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, জাপানে শিশু প্রতিপালন খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায়, অভিভাকরা সন্তান নিতে চান না।
সরকারি হিসাব অনুয়ায়ী, গত বছর জাপানের জন্মহার রেকর্প পরিমাণে হ্রাস পায়, যা অন্য কোনো সময়ে দেখা যায়নি। সে বছর দেশটির জন্মহার প্রথমবারের মতো আট লাখের নিচে নেমে যায়। সরকারের ধারণা ছিল, আরও আট বছর পরে গিয়ে এমনটি হতে পারে।
আরও পড়ুন> টোকিও ছাড়লে নাগরিকদের টাকা দেবে জাপান সরকার
ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ অনুসারে, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর জাপানই সন্তান প্রতিপালনের দিক থেকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ। জীবনযাত্রা অত্যন্ত উন্নত হওয়ায় দেশটিতে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিবছরই জাপানের জনসংখ্যা কমছে।
এদিকে, ওই অঞ্চলের একাধিক দেশ বার্ধক্য ও সংকুচিত জন্মহারের সমস্যায় পড়েছে। গত সপ্তাহেই চীন জানায়, ৬০ বছরের মধ্যে ২০২২ সালে তাদের জনসংখ্যা প্রথমবারের মতো হ্রাস পায়।
জন্মহার বাড়াতে ২০২৩ সাল থেকে প্রত্যেক সদ্যজাত সন্তানের জন্য অভিভাবকদের এককালীন ৫ লাখ ইয়েন, বাংলাদেশি টাকায় যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০২ টাকা প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন ফুমিও কিশিদা। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তবে সেসময় সরকারের সিদ্ধান্তে দেশটির জন্মহার আদৌ বাড়বে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। কারণ, জাপানের হাসপাতালগুলোতে সন্তান জন্মদানের ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৭৩ হাজার ইয়েন। সে হিসাবে হাসপাতালের খরচ মেটানোর পর দম্পতিদের হাতে থাকবে মাত্র ২৭ হাজার ইয়েন।
আরও পড়ুন> টোকিওতে নতুন বাড়ি বানাতে সৌর প্যানেল বাধ্যতামূলক
এর আগেও সাধারণ জনগণকে সন্তান জন্মদানে উৎসাহী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় দেশটি। কিন্তু আশানুরূপ সুফল আসেনি। ২০০৯ সাল থেকে জন্মহার বৃদ্ধির জন্য দম্পতিদের প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে জাপান। প্রতি বছরই এ প্রণোদনার পরিমাণ বেড়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ