নেপালে ৫ বছরের মধ্যে আরও একটি ভয়াবহ প্লেন দুর্ঘটনা
রোববার সকাল হতে না হতেই এতগুলো মানুষের মৃত্যু দেখলো নেপালের পোখারার মানুষ। কাঠমান্ডু থেকে পোখারার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি এটিআর-৭২ প্লেন বিধ্বস্ত হয় সকালে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বলা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এটি।
নেপালের সিভিল এভিয়েশনের মুখপাত্র জগন্নাথ নিরাউলা জানান, ৭২ জন আরোহী নিয়ে উড্ডয়ন করেছিল প্লেনটি। তিনি বলেন, পাহাড়ি এলাকা হলেও দুর্ঘটনার সময় আকাশ পরিষ্কার ছিল। তাহলে কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটলো সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
আরও পড়ুন> ৭২ আরোহী নিয়ে নেপালে প্লেন বিধ্বস্ত, নিহত ৪০
এদিকে, কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন দেশটির সেনা সদস্যরাও।
এক বিবৃতিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার (১৫ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সংযোগ ছিল প্লেনটির। এরপর এটি বিধ্বস্ত হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার ২৪ বলছে, প্লেনটি ১৫ বছরের পুরোনো ছিল।
এটিআর৭২ হলো একটি বহুল ব্যবহৃত টুইন ইঞ্জিন প্লেন, যা এয়ারবাস ও ইতালির লিওনার্দোর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট অনুসারে, ছয়টি এটিআর৭২-৫০০ প্লেন রয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন> নেপালে বিধ্বস্ত প্লেনে ছিল ১৫ বিদেশি যাত্রী
এর আগে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলা কাঠমান্ডু পোস্টকে জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত হওয়া প্লেনটিতে মোট ৬৮ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও আছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান, একজন আইরিশ, দুজন দক্ষিণ কোরিয়ার, একজন অস্ট্রেলিয়ার, একজন ফরাসি ও একজন আর্জেন্টিনার নাগরিক রয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল তার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নেপালের এই প্লেন দুর্ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় ২০১৮ সালের ইউএস-বাংলার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা। ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বম্বার্ডিয়ার ড্যাশ এইট কিউ-৪০০ যাত্রীবাহী প্লেন।
আরও পড়ুন> বাংলাদেশের যত বিমান দুর্ঘটনা
সে দুর্ঘটনায় মোট ৫১ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হন। দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যান ২০ জন। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ছিলেন সেদিনের ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্বে। তার সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ।
পরে ওই দুর্ঘটনার জন্য পাইলটের মানসিকভাবে অস্থির অবস্থায় দিকভ্রান্ত হওয়া ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবকে দায়ী করে নেপালের তদন্ত কমিটি। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই দুর্ঘটনা ১৯৯২ সালের পর নেপালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্লেন দুর্ঘটনা ছিল।
আরও পড়ুন> বিশ্বের ১০টি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা
নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় ২০০০ সাল থেকে অন্তত ৩০৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ উল্লেখ করে ২০১৩ সাল থেকে নেপালি এয়ারলাইন্সকে তার আকাশসীমা থেকে নিষিদ্ধ করে। এবারের দুর্ঘটনার পেছনেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে। যদিও ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হওয়ার পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: রয়টার্স
এসএনআর/জেআইএম