কানাডা হঠাৎ বিদেশিদের বাড়ি কেনা বন্ধ করলো কেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩৭ এএম, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশিদের জন্য আগামী দুই বছর নতুন বাড়ি কেনা নিষিদ্ধ করেছে কানাডা। আপাতভাবে স্থানীয় বাজারে বাড়ির চড়া দাম কমানোর লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডীয় সরকার। তবে এতে বিশ্বের কাছে দেশটির আবাসন খাতে বৈশ্বিক অর্থপ্রবাহ নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

নতুন বছরের প্রথমদিন, অর্থাৎ গত ১ জানুয়ারি থেকে বিদেশি নাগরিকদের বাড়ি কেনায় কানাডা সরকারের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। তবে স্থায়ী বাসিন্দা ও উদ্বাস্তুদের জন্য এ নির্দেশনা প্রযোজ্য নয়। আদেশ অমান্য করলে বাড়ির ক্রেতাদের কয়েক হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে।

কানাডা সরকারের দাবি, ‘অ-উৎপাদনশীল বিদেশি মালিকানা আটকাতে’ এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। গত মাসে কানাডার আবাসন বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি মন্ত্রী আহমেদ হুসেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই আইনের মাধ্যমে আমরা কানাডীয়দের মালিকানাধীন আবাসন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এতে এ দেশে বসবাসকারী প্রত্যেকেরই সুবিধা হবে।’

কানাডাজুড়ে বাড়ির দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত জুন মাসে এ নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছিলেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। সেখানে অনেক বছর ধরেই বাড়ির দাম বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময় কিছুটা নিম্ন সুদের হার এবং উচ্চতর নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের কারণে তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। বাড়ির ভাড়াও বেড়ে গেছে প্রচুর, বিশেষ করে শহরাঞ্চলগুলোতে।

jagonews24

ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির (ইউবিসি) সেন্টার ফর আরবান ইকোনমিক্স অ্যান্ড রিয়েল এস্টেটের পরিচালক টমাস ডেভিডফ বলেছেন, নতুন আইনটি কানাডার দুই বৃহত্তম শহর এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল রিয়েল এস্টেট বাজার টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারে সম্ভবত খুব কমই কাজে আসবে। সেখানে বর্ধিত প্রাদেশিক কর এরই মধ্যে বিদেশিদের বাড়ি কেনাকে নিশানা করেছে।

তবে সামগ্রিকভাবে চাহিদা কমার ফলে বাড়ির দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং কানাডার যেসব শহরে আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগে উচ্চ হারে কর আরোপ করা হয়নি, সেখানে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বেশি কার্যকরী হতে পারে বলে মনে করেন ডেভিডফ।

তিনি বলেন, ‘বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ থাকলে সমস্যা নেই। সমস্যা হলো বাড়িগুলো খালি থাকা বা নিয়মিত ব্যবহার না করা। যদি বিদেশ থেকে কেউ একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চায় এবং স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী কাউকে ভাড়া দিতে চায়, তবে এটি কোনো সমস্যা নয়। আমি মনে করি, সম্পত্তি ব্যবহারের পরিবর্তে মালিকের জাতীয়তার দিকে মনোনিবেশ করা ভুল সিদ্ধান্ত।’

কানাডার আবাসন বাজার
২০১৭ সালে কানাডায় প্রথমবারের মতো জাতীয় আবাসন কৌশল উন্মোচন করে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। তাতে গৃহীত বেশ কয়েকটি আবাসন নীতির মধ্যে অন্যতম ছিল বিদেশি মালিকানার ওপর নিষেধাজ্ঞা। ১০ বছরব্যাপী কয়েকশ কোটি ডলারের এ পরিকল্পনার লক্ষ্য নিম্ন আয়ের কানাডীয় নাগরিকদের নতুন বাড়ি নির্মাণে সহায়তা এবং নতুন ক্রেতাদের জন্য ট্যাক্স সুবিধা ও অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করা। সাশ্রয়ী আবাসনও ছিল দেশটির গত বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটের অন্যতম অংশ।

২০২১ সালের মার্চ মাসে কানাডিয়ান রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশটিতে একটি বাড়ি কেনার গড় খরচ রেকর্ড ৭ লাখ ১৬ হাজার ৮২৮ কানাডীয় ডলারে পৌঁছেছে (৫ লাখ ২৪ হাজার মার্কিন ডলার প্রায়), যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এর পেছনে ভূমিকা ছিল মূলত ভ্যাঙ্কুভার, টরন্টো ও এদের আশপাশের এলাকাগুলোতে সম্পত্তির উচ্চমূল্য।

এক মাস পরে রয়্যাল ব্যাংক অব কানাডার জরিপে দেখা যায়, বাড়ির মালিক নন এমন ৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশই ভবিষ্যতে সম্পত্তির মালিক হওয়ার আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন।

jagonews24

ইউবিসি’র আবাসন গবেষণা সহযোগী পরিচালক পেনি গুরস্টেইন বলেন, ‘যারা বাজারে আসতে পারছে না তারা ভাড়া নিচ্ছে। কিন্তু তাদের আয়ের অনেকটাই এখন ভাড়ার পেছনে খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য সত্যিই আবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার।’

গুরস্টেইন আরও বলেন, ‘বিদেশিদের বাড়ি কেনায় কানাডা সরকারের নিষেধাজ্ঞা এমন একটি বার্তা পাঠাবে যে, আমাদের আবাসন বাজারে বৈশ্বিক অর্থ আসার বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে এটি দামের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা স্পষ্ট নয়।’

কানাডার আবাসন খাতে বিদেশি মালিকানার অংশটি খুবই ছোট। সরকারি ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্যমতে, ২০২০ সালে অন্টারিওতে ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ আবাসিক সম্পত্তির মালিক ছিলেন বিদেশিরা৷ টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার মেট্রোপলিটন এলাকায় এর হার ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

গুরস্টেইনের মতে, ‘আমাদের আবাসনকে অবকাঠামো ও অর্থনীতির অন্যান্য খাতকে উত্সাহিত করার উপায় হিসেবে ভাবতে হবে, কেবল আবাসন শিল্প হিসেবে নয়।’

সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।