রূপপুরের সরঞ্জামবাহী রুশ জাহাজ ভিড়বে হলদিয়ায়, ‘সমস্যা নেই’ ভারতের
বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরঞ্জাম নিয়ে আসা রুশ জাহাজ উরসা মেজর অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে ভিড়তে চলেছে। সেখানে মালামাল খালাসের পর ওই সব সরঞ্জাম সড়কপথে বাংলাদেশে আনা হবে বলে ঠিক হয়েছে। জাহাজটি মূলত মোংলা বন্দরে ভিড়তে চেয়েছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির জেরে সেটিকে বন্দরে ঢুকতে দেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করছে, তাই প্রতিবেশী দেশটির একটি বন্দর ব্যবহার করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ঘুরপথে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ।
গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘মেরিন ট্র্যাফিকের’ তথ্য অনুযায়ী, রুশ পতাকাবাহী জাহাজটি গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালেও ভারতে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। এর আগে বেশ কয়েকদিন সেটিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা যায়।
‘সমস্যা নেই’ ভারতের
ভারতের কলকাতা-হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, চ্যানেলে কুয়াশার অবস্থা কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি হলদিয়া বন্দরে ভিড়তে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো রুশ জাহাজ ভারতীয় বন্দরে ভিড়লে তাতে সরকারের কোনো সমস্যা নেই।
গত ২৯ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলার এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘ওই রুশ জাহাজটির গতিবিধির বিষয়ে আমার কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই। তবে এটি যদি ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তাই! তথাকথিত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল এখনো তা। ভারতের সেই নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ভারত যে আমলে নিচ্ছে না, সেটি পরিষ্কার করে অরিন্দম আরও বলেন, ‘আজকের এই টেকনিক্যাল দুনিয়ায় কোনটা নিষেধাজ্ঞা, কোনটা নয় তা নিয়েও বহু বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে পৃথিবীর যেখান থেকে আমরা সহজে তেল পাবো সেখান থেকেই আনবো। এটাই আমাদের নীতি। তেল ছাড়া অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।’
বিতর্ক কী নিয়ে?
‘উরসা মেজর’ নামে জাহাজটি গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের দিকে রওয়ানা দিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ নামে একটি রুশ জাহাজ। সেটির রঙ ও নাম পাল্টে ‘উরসা মেজর’ নামে চালানো হচ্ছে। জাহাজটিকে বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে তা যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে, সেটিও জানিয়ে দেওয়া হয়।
এরপরই বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, উরসা মেজরকে বাংলাদেশের কোনো বন্দরেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তের কথা ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কিকেও জানানো হয়। এরপর থেকে ওই রুশ জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে ভাসছিল।
কেএএ/