২০২৩ সালের মহাকাশ গবেষণা-মিশনে এগিয়ে থাকবে যারা
মহাকাশ ও মহাশূন্য নিয়ে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই। সভ্যতার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মানুষ গ্রহ, নক্ষত্র, সৌরজগত, ছায়াপথ নিয়ে গবেষণা করে আসছে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এ গবেষণা অন্যরকম গতি ও রূপ লাভ করেছে।
প্রতিবছরই বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মহাকাশে তাদের নতুন অভিযান বা মিশন শুরু করে। ২০২৩ সালেও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। আগামী বছর চাঁদ ও মহাকাশের আরও দূরে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া, ভারত ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)।
ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে পশ্চিমা শক্তিকে এড়িয়ে চললেও, মহাকাশ গবেষণায় পিছিয়ে নেয় চীন। এ খাতে নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। তাছাড়া, সার্বিক প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব রয়েছে মহাকাশযান নির্মাণকারী ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর।
বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মহাকাশ গবেষকরা যে কাজট নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন তা হলো, পৃথিবীর বাইরে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, খুঁজে বের করা। আর এ রহস্য অনুসন্ধানের জন্য তারা বেছে নিচ্ছেন সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের উপগ্রহগুলোকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের এপ্রিলে আমাদের সৌরজগদের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির তিনটি উপগ্রহে ‘জুপিটার আইসি মুন এক্সপ্লোরার (জুস)’ নামক মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)।
অ্যারিয়্যান-৫ নামের রকেটে করে বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় তিনটি উপগ্রহ গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো ও ইউরোপাতে পাঠানো হবে জুসকে। ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু করলে ২০৩১ সাল নাগাদ এটি গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মহাকাশযানটি বৃহস্পতির ওই তিনটি উপগ্রহে জৈবজীবনের অস্তিত্ব খোঁজ করবে। মহাকাশ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের ধারণা, উপগ্রহগুলোর মূলপৃষ্ঠের নিচে বরফে পরিণত পানির আধার রয়েছে।
এদিকে, আগামী বছরের গ্রীষ্মে ‘১৬ সাইকি’ নামের আয়রন বা লোহা সমৃদ্ধ একটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণের জন্য ‘সাইকি স্পেসক্রাফট’ উৎক্ষেপণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
জোতির্বিদদের ধারণা, পৃথিবীর সৌরজগতের শুরুর দিনগুলোর একটি গ্রহের শেষ চিহ্ন হলো, ‘১৬ সাইকি’।
সাইকিকে যে রকেটে করে মহাশূন্যে পাঠানো হবে, সেটির সঙ্গে ‘জানুস’ নামের আরও একটি মহাকাশযান পাঠানো হবে। জানুসের মাধ্যমে আরও দুটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ করা হবে।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ‘বেনু’ নামক গ্রহাণুতে ‘ওসিরিস-রেক্স’ নামের মহাকাশযান পাঠায় নাসা। সেটির একটি ক্যাপসুল বেনুর উপরিভাগ থেকে এককেজি ধুলা-পাথর সংগ্রহ করে পৃথিবীর দিকে রওনা দিয়েছে, যা ২০২৩ সালে পৃথিবীতে এসে পৌঁছাবে ২০২৩ সালে।
ক্যাপসুলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে অবতরণ করবে। এরপর নিজের কাজ চালিয়ে যাবে অসিরিস-রেক্স। ২০২৯ সালে এটি পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থানকারী আরেকটি গ্রহাণু অ্যাপোফিসে মিশন শুরু করবে।
মহাকাশ গবেষণার পিছিয়ে থাকতে চায় না ভারতও। আগামী বছরের জুনে ‘চন্দ্রযান ৩’ কে চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। মিশনে একই সঙ্গে একটি ল্যান্ডিং মডিউল ও রোবটিক রোভার পাঠাতে চায় ভারত।
চাঁদে প্রথম মিশন হিসেবে ২০০৮ সালে ‘চন্দ্রাযান ১’ রকেট উৎক্ষেপণ করে ভারত, যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির কণা আবিষ্কার করেছিল। এরপরে ২০২৯ সালের ১৯ জুলাই ‘চন্দ্রযান ২’ উৎক্ষেপণ করে ভারত। তবে, শেষ পর্যন্ত সেটি চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ হয়।
মহাকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধিপত্য রাখতে মরিয়া ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। তাই তো, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ‘ডিয়ারমুন’ মিশনে জাপানি ধনকুবের ইউসাকু মায়েজাওয়াসহ আট পর্যটককে চাঁদের চারপাশ ঘুরিয়ে আনবে স্পেসএক্সের একটি মহাকাশযান।
একসঙ্গে ১০০ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম স্টারশিপ নভোযানের প্রথম মিশন হবে এটি। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে মহাকাশে যাওয়ার কথা রয়েছে নাসার আর্টেমিস- ২ এর। এটিও নভোচারীদের চাঁদের চারপাশে ঘুরিয়ে আনবে।
তাছাড়া, ২০২৫ কিংবা ২০২৬ সালের মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানব নভোচারীদের পাঠানো পরিকল্পনা করছে নাসা। সংস্থাটি ওই মিশনে চাঁদের বুকে প্রথম নারী নভোচারীর পদচারণার মাধ্যমে ইতিহাস গড়তে চায়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধে ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে নিজস্ব লুনার বেইজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে চীন। তবে এ পরিকল্পনার বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি দেশ দুটি।
তাছাড়া ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীর কক্ষপথে ‘শানতিয়ান’ নামের একটি টেলিস্কোপ পাঠাতে চায় চীন। এরই মধ্যে চাঁদ আর মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠিয়েছে দেশটি। এমনকি, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে চীনের ‘তিয়ানগং’ স্পেস স্টেশনেরও।
এসব ছাড়াও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ২০২৩ সালে তাদের একটি বিশেষ স্পেস রাইডার বা মহাকাশযানের পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করেছে।
এ নভোযানটিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য গবেষণাগার থাকবে। এর পাশাপাশি এটি গবেষণায় আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কম খরচে মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি গবেষণা শেষ হওয়ার পর স্পেস রাইডার পৃথিবীতে ফিরে আসবে ও কিছুদিনের বিশ্রাম শেষে আরেকদল গবেষকদের নিয়ে আবার মহাকাশে উড়ে যাবে।
ইউরোপীয় রকেট নির্মাণকারী কোম্পানি অ্যারিয়্যান স্পেস ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ তাদের নতুন মহাকাশযান অ্যারিয়্যান ৬ পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে।
এটি মূলত অ্যারিয়্যান ৫ এর উন্নত সংস্করণ, যা প্রতিটি ফ্লাইটের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনবে। করে, আশা করা যায় যে এর ফলে অ্যারিয়্যান কোম্পানি ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এসএএইচ