দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
জলবায়ু কূটনীতি আরও চ্যালেঞ্জিং হবে
সাম্প্রতিক মাস বা বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় সব মহাদেশ। বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস বিল্ড-আপের কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ধারণা কার হচ্ছে, ২০২৩ সালে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বিশ্ব। বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, দাবানল, তাপদাহ আরও বেড়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন স্থিরভাবে গড় তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনশীলতার প্রাকৃতিক উৎসগুলোও চাপ বাড়াচ্ছে। এসব উৎসের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে ‘এল নিনো’ বা দক্ষিণাঞ্চলীয় ওসসিলিয়েশন, যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের চারপাশের জলবায়ুর দুই অবস্থাকে দোদুল্যমান করে তোলে। দুই অবস্থার একটি ‘এল নিনো’ অন্যটি ‘লা নিনা’। এল নিনোর কারণে মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ও অস্ট্রেলাসিয়াতে খরা দেখা দেয়। অন্যদিকে লা নিনা পূর্ব আফ্রিকায় খরা, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় অধিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যুক্ত।
বর্তমানের লা নিনা শুরু হয়েছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। এখন এটির তৃতীয় বছর চলে। ঋতুগত পূর্বাভাসে আগেই জানানো হয়, ২০২২ সালের শেষের দিকে পূর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টি হবে না। এতে দেখা দেবে খরা। বেড়ে যাবে খাদ্য অনিরাপত্তা।
যদি এল নিনো’ ও ‘লা নিনার বর্তমান চক্র ২০২৩ সালে সফল হয়, তাহলে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ের চেয়ে আরও খারাপ হবে।
এই ধ্বংসাত্মক ও ব্যয়বহুল ঘটনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা ও বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাস করে জলবায়ুকে স্থিতিশীল করা আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার উদ্দেশ্য। ২০২২ সালের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে মিশরে। জলবায়ু কূটনীতির জন্য কপ-২৭ বৈঠকটি একটি নিম্ন পর্যায়ে এসেছিল। এমন এক সময় সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় যখন বিশ্ব ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে। হঠাৎ করে জলবায়ু রাজনীতিও প্রকাশ্যে চলে আসছে। যদিও বিষয়টিকে অন্যান্য রাজনৈতিক ইস্যু থেকে আলাদা করে রাখা হতো। দীর্ঘমেয়াদি নির্গমন হ্রাসের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি শক্তি সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া কয়লার ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করেছে।
ইউরোপীয় জলবায়ু ফাউন্ডেশনের প্রধান লরেন্স তুবিয়ানা বলেছেন, যুদ্ধটি পূর্ব-বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি আরও বলেছেন, যুদ্ধটি আগের চুক্তিগুলোকে বিনির্মাণ করার পাশাপাশি একটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক জগাখিচুড়ি তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের জলবায়ুবিষয়ক পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশটির জলবায়ুবিষয়ক দূত সুলতান বিন আহমেদ আল জাবের। তিনি আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল উৎপাদনকারী আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানিরও প্রধান।
আহমেদ আল জাবের প্রকাশ্যে বলেছেন, তেল ও গ্যাস একটি নেট-জিরো কার্বন অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে বিশ্বব্যাপী শক্তির রূপান্তরে সক্রিয় অংশীদার হতে হবে। তার এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে মনে করা হচ্ছে বিশ্ব নেট জিরোতে পৌঁছালেও কিছু জীবাশ্ম জ্বালানী মধ্য শতাব্দীতেও ব্যবহার করা হবে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা নেট-জিরো লক্ষ্য পূরণের জন্য নতুন জীবাশ্ম-জ্বালানি উন্নয়ন না করার আহ্বান জানিয়েছে। জ্বালানি পরিবর্তনে অয়েল কোম্পানিগুলোর ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হবে আমিরাতের সম্মেলনে। কারণ এসব কোম্পানি সমস্যার অংশ না কি সমাধানের তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিতর্ক।
এমএসএম/জেআইএম