ঋষি সুনাক কি ব্রিটেনে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালে ব্রিটিশ রাজনীতি একজন সনাতন ধর্মীর হাত ধরেই শুরু হবে। ব্যাপক শিল্প কর্মকাণ্ডের মাঝেও, নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের রক্ষণশীল সরকারের ভাগ্য, ভোটার, এমপি বা ধর্মঘটকারী পরিবহন শ্রমিকদের তৈরি রাজনৈতিক আবহাওয়াকে কেন্দ্র করেই নির্ধারিত হবে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ব্রিটেনের রাজনৈতিক হালচাল। 

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে উষ্ণ শরতের পর ঠান্ডা আবহাওয়া ব্রিটেন সরকারের পতন ঘটাতে পারে। বিপরীতে, কম জ্বালানি বিল ও জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষেত্রে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

কল্পনা করা যেতে পারে, রাজনৈতিক আবহাওয়া সুনাকের ওপর সুবাতাস নিয়ে আসছে। যদি এমন হয় আগামী বসন্তে প্রত্যাশার চেয়ে একটু ভালো পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। সুনাক যখন ২০২২ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন লেবার পার্টি ৩০ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল। এখন, কিছু জরিপে কনজারভেটিভরা মাত্র পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। এমনকি কর বৃদ্ধির বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ও চ্যান্সেলর জেরেমি হান্টের দ্বারা আরোপিত ব্যয় হ্রাসের পরেও।

ঋষি সুনাকের অসহায় পূর্বসূরি লিজ ট্রাসের বন্ধকী খরচ আকাশচুম্বী হওয়ায় জনগণের দোষারোপের পর, সুনাক তার দলের চেয়েও বেশি অনুমোদন রেটিং উপভোগ করেন এবং যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় ও লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমারের চেয়ে অর্থনীতিতে বেশি বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হবে না ব্রিটেনে। ফলে তার উপদেষ্টারা প্রথম দিকে এ বিষয়ে বিড়বিড় করতে শুরু করলেও কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনার পর সুনাক সিদ্ধান্ত নেন ঝুঁকি না নেওয়ার।

সুনাক খুব শিগগির বাস্তবায়ন চান যে বিষযটির তা হলো, বসন্তে প্রতিদিন ৫ হাজার মানুষ নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়। এ ঘটনা ব্রিটেনকে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে প্ররোচিত করে। এই চুক্তির আওতায় চোরাচালানকারী দলগুলোকে আটকাতে ফ্রান্সকে বছরে ২ বিলিয়ন ইউরো বা ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করবে যুক্তরাজ্য। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘এটি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি।’ তিনি বলেন, আগামী বছর যখন মাছ ধরার অধিকার নিয়ে আলোচনা হবে তখন আমরা আমাদের বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য উন্মুখ।’

গত জুন মাসে অসন্তোষের গ্রীষ্ম শুরু হয় যখন চিকিৎসকরা একের পর এক ধর্মঘট শুরু করেন। একটি দুর্বিষহ গ্রীষ্ম কাটাতে, ৩ হাজারের কম সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে একজন রক্ষণশীল এমপি ফ্লোর ক্রসিং করে লেবার পার্টিতে যোগ দেন। তিনি বলেন, স্যার কেয়ারের লেবার পার্টি কনজারভেটিভের ২০১৯-এর ইশতেহারে যে মূল্যবোধের দ্বারা আমি নির্বাচিত হয়েছি সেই মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।

লেবারদের ওপর রক্ষণশীলদের আক্রমণ কম হয়। তারা স্যার কেয়ারকে ‘কন্টিনিউটি করবিন’ (তার বাম পূর্বসূরি জেরেমি করবিনের পরে) হিসাবে ফ্রেমবন্দী করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সুনাক বরিস জনসনের ব্যবহৃত কৌশলের কাছে নতি স্বীকার করেননি। বরিস জনসন, যিনি একবার ভুলভাবে স্যার কেয়ারকে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান থাকাকালীন, জিমি স্যাভিলের বিরুদ্ধে বিচারকাজের জন্য। বিবিসির সাবেক উপস্থাপক জিমি স্যাভিলের যৌন কেলেংকারি প্রকাশ হওয়ার পর বৃটেনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জিমি স্যাভিল মারা যান ২০১১ সালে, কিন্তু প্রায় এক বছর পর এক টেলিভিশন চ্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে শিশুদের ওপর তার যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রথম ফাঁস হয়। তারপরই একের পর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আসতে থাকে তার বিরুদ্ধে।

ব্যাকবেঞ্চে, সুনাক লেবারকে হারানোর জন্য হয়তো ভালো করবেন। সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের নেতৃত্বে টোরি বিদ্রোহীরা তার সমর্থনেই রয়েছেন। সুয়েলা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন, কয়েক মাস ধরে অর্থনেতিক বিপর্যয়ের পর বরখাস্ত করা হয়েছিল, যার কারণে সরকারের কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে।

ভোক্তা-অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ মার্টিন লুইস সতর্ক করেন, ২০২৩ সালের শেষের দিকে ঠান্ডা আবহাওয়া অস্থিরতা তৈরি করতে পারে যদি না লোকেরা তাদের জ্বালানি বিলের জন্য আবার সহায়তা না পায়। একবছর আগের তুলনায় গ্যাসের দামও কম নয়। ‘যারা খেতে পারছেন না তারা তাপ ব্যবহার কমিয়ে দিন’ এই ব্যানারে ঋষি সুনাকের একটি জ্বালানি-সাশ্রয়ী প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। স্কি জ্যাকেট পরা, ঋষি সুনাক হয়তো ভাবছেন, আগাম নির্বাচন, খারাপ ধারণা হবে না।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।