হলিউড-বলিউডের মতো বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি গড়তে চায় সৌদি
সম্প্রতি চলচ্চিত্র প্রযোজনার দিকে ঝুঁকেছে সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি মিডিয়া কোম্পানি। এরই ধারবাহিকতায় চলতি বছর মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা এজিসি’র সঙ্গে যৌথভাবে ‘ডেজার্ট ওয়ারিওর’ নামের একটি সিনেমায় প্রযোজনা করে সৌদির সব থেকে বড় মিডিয়া কোম্পানি মিডিল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার (এমবিসি)।
সপ্তম শতকের হাইন্দ নামের এক সৌদি রাজকুমারির বীরত্বগাঁথা নিয়ে নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন সৌদি বংশদ্ভূত ব্রিটিশ তারকা আয়শা হার্ট ও ক্যাপটেন অ্যামেরিকার তারকা অ্যান্থনি ডুয়েন ম্যাকি।
কয়েক বছর ধরে, মধ্যপ্রাচ্য চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রযোজনার দিকে মনোনিবেশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে সৌাদির টেলিভিশনখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
গবেষণা সংস্থা ওমদিয়ার কনস্টান্টিনোস পাপাভাসিলোপোলোস বিভাগ বলছে, ২০২৩ সালে সৌদি আরবে দ্বিগুন করা হবে নিজস্ব ভাষায় নির্মিত টিভি সিরিজের সংখ্যা। তাছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি সরকার কমপক্ষে ১০০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে ও প্রযোজনা করতে চায়।
বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল মিশরকে। কিন্তু দেশটির কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনের কারণে হলিউড ও বলিউডের মতো বড় বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সেখানে শুটিং করা বাদ দিয়ে দিয়েছে।
মিশরের এমন পরিস্থির সুযোগ নিয়েই সৌদি প্রশাসন তাদের দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যের মিডিয়া হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। গত পাঁচ বছরে সৌদি সরকার দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, তারা মিডিয়ার ওপর কঠোরতা কমিয়ে এ খাতের অগ্রগতিতে আগ্রহী হয়েছে।
তাই তো কয়েক বছর আগেও যে দেশে সিনেমা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা ছিল, এখন সেখানেই শুটিংয়ের জন্য দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। এরই মধ্যে দেশটিতে হলিউডের বেশ কয়েকটি সিনেমার শুটিং হয়েছে, এখন বলিউডের একাধিক সিনেমা শুটিংয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১৭ সালে অর্থসামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে ‘ভিশন-২০৩০’ হাতে নেয় সৌদি সরকার। এ পরিকল্পনার আওতায় দেশটির শিল্পে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেগুলোরই একটি হলো, সিনেমা প্রদর্শনীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এমনকি, সৌদি সরকার চলচ্চিত্র শিল্পে ছয় হাজার ৪০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
২০১৮ সালে দেশটিতে আর্থসামাজিক সংস্কারের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ওই বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে সর্বসাধারণের জন্য সিনেমা প্রদর্শনীর অনুমতি দেওয়া হয়। রাজধানী রিয়াদের এএমসি সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হয় মার্ভেল স্টুডিওর সিনেমা ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’।
তবে সৌদির মতো ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল দেশে সিনেমা নির্মাণ ও প্রচারে কিছু বাধা রয়েই গেছে। যেমন, সৌদির স্থানীয় কলাকুশলীদের চলচ্চিত্র নির্মাণের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এ খাত সংশ্লিষ্টদের বিদেশি সহায়তা ও জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
আবার আরবি ভাষায় যতই সিনেমা বানানো হোক না কেন, তা হলিউডের দর্শকদের সেভাবে টানতে পারবে না বলে মনে করছেন অনেকে। এর প্রধান কারণ হতে পারে, দেশটির কঠোর সেন্সরশিপ নীতিমালা।
সচারচর হলিউড দর্শকরা খোলামেলা দৃশ্য দেখতে অভ্যস্থ ও অনেকেই এমন দৃশ্য পছন্দ করেন। কিন্তু সৌদি আরবে সিনেমা প্রদর্শনের সময়, সমকামিতা, চুম্বন কিংবা অন্যান্য অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলো ছেটে ফেলা হয়।
২০২৩ সালে চলচ্চিত্র শিল্পের সৌদির বাজেট বাড়বে। এরই মধ্যে চলতি বছরে সেখানে এমবিসির প্রযোজনায় ‘ডেজার্ট ওয়ারিয়র’ ও ‘রাইজ অব দ্য উইচেস’ সিনেমার শুটিং হয়েছে। সিনেমা দুটি ২০২৩ সালে মুক্তি পাবে।
এদিকে, নেটফ্লিক্সও আরব-তৈরি কন্টেন্ট নির্মানে বিনিয়োগ করছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, নেটফ্লিক্স এখন নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন বাজারের খোঁজ করছে।
এ বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের নির্মিত আরবি ভাষার প্রথম কোনো চলচ্চিত্র ‘পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস’ মুক্তি দেয়। তাছাড়া বিবাহবিচ্ছেদের পর মিশরীয় এক নারীর জীবন নিয়ে নির্মিত শো ‘ফাইন্ডিং ওলা’ প্রচার করে নেটফ্লিক্স। ২০২৩ সালে এটির ছয় পর্বের দ্বিতীয় মৌসুম প্রচার করা হবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এসএএইচ