ইউরোপীয় কূটনীতির চরম পরীক্ষা নেবে ইউক্রেন যুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপের জন্য ২০২২ সাল যদি হয় ইউক্রেন ইস্যুতে অপ্রত্যাশিত ঐক্যের বছর, তাহলে ২০২৩ হবে সেই ঐক্যের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। আর সেটি কীভাবে সামনে আসবে তা নির্ভর করছে যুদ্ধের পরিস্থিতি কী হয় তার ওপর। ইউক্রেন যুদ্ধ সামনের বছরও চলতে পারে। তাতে রাশিয়া হয়তো ক্রমান্বয়ে পিছু হটতে বাধ্য হবে, কিন্তু হারানো সব অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবে না ইউক্রেন। সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনের ওপর ধীরে ধীরে চাপ দিতে শুরু করবে ইউরোপ।

ইউরোপীয়দের কেউ কেউ রুশ গ্যাস কেনা ফের শুরু করা ও জ্বালানিতে ভর্তুকির খরচ কমানোর পরিকল্পনায় প্রলুব্ধ হবেন। অন্যরা ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক-অর্থনৈতিক সহায়তা কমে যাওয়ার ভয় করবেন। কারণ, তেমনটি হলে অতিরিক্ত বোঝা ইউরোপের ঘাড়েই চাপতে পারে। তাছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো কেউ কেউ মনে করতে পারেন, রাশিয়া সবসময় তাদের কাছাকাছি থাকবে। তাই যোগাযোগের চ্যানেলগুলো ফের চালু করা উচিত।

ইউরোপ বলবে, তার দোরগোড়ায় ক্রমাগত যুদ্ধ চলতে পারে না। যদিও এই কণ্ঠস্বরগুলো খুব বেশি প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা যায় না, তবে এ নিয়ে ইউরোপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে, পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়ার মতো সম্মুখ সারির দেশগুলো যদি ভাবতে শুরু করে, ফ্রান্স-জার্মানির নেতারা ভ্লাদিমির পুতিনকে পুরোপুরি পরাজিত করতে হবে এমন ধারণায় আর ততটা বিশ্বাসী নন।

jagonews24

এই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা অন্যতম দেশ হবে ইতালি। দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ন্যাটো ও ইউক্রেনের পক্ষে দৃঢ় সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তবে ইতালিও গভীর অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশটি আড়াই লাখ কোটি ইউরো (২ দশমিক ৪ লাখ কোটি মার্কিন ডলার) ঋণে জর্জরিত, যা তার জিডিপির ১৫০ শতাংশের চেয়েও বেশি। ইতালির বৃহৎ উৎপাদন খাত রয়েছে, যা জ্বালানির চড়া দামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দেশটি তার নিজের সুরক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন ইস্যুতে ইতালির অবস্থান ভালোভাবেই উল্টে যেতে পারে এবং তারা আলোচনার পক্ষে কথা বলতে শুরু করতে পারে। মেলোনির জোটসঙ্গী মাত্তিও সালভিনি এরই মধ্যে সেটি শুরুও করে দিয়েছেন।

২০২৩ সালে আন্তঃ-ইউরোপীয় উত্তেজনার সবচেয়ে বড় উত্স হতে চলেছে এই জ্বালানি বিতর্ক। কারণ নতুন বছরে আরও বেশি সংখ্যক দেশ মন্দায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে ২০২০ সালে পাস হওয়া ৭৫ হাজার কোটি ইউরো কোভিড তহবিলের মতো প্যান-ইউরোপীয় জ্বালানি তহবিলের জন্যে দাবি উঠতে পারে। তবে এই আহ্বান সম্ভবত বাস্তবায়িত হবে না, বিশেষত উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর অনড় বিরোধিতার কারণে। কিন্তু এটি ইউরোপজুড়ে যথেষ্ট তিক্ততা ছড়িয়ে দেবে।

jagonews24

এরপরও যুদ্ধ যদি সত্যিই শেষ হয়? এটি হয়তো যুদ্ধের ময়দানে ঘটবে না, তবে ক্রেমলিনের মানসিকতার পরিবর্তন হলে হতে পারে। কিন্তু তখন আবার ইউরোপে অন্য ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। ইউক্রেন পুনর্গঠনের ভার কে নেবে এবং কে কতটা ব্যয় করবে তা নিয়ে ঝামেলা লাগতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র তিক্ত সত্যটাই বলবে যে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার সিংহভাগ সে দিয়েছে। এখন ইউরোপের পালা। যদিও বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলো তাদের কাজ করবে। কিন্তু সেটিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

উন্নয়নশীল বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক তহবিল খেয়ে ফেলবে ইউক্রেন পুনর্গঠন। ফলে বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মধ্যে বিতর্ক তৈরি হবে এবং উন্নত বিশ্বের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠবে। অর্থাৎ, কোনো না কোনোভাবে ইউরোপকে আরও বহু বছর ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।