লুই ভুটন থেকে টিফানি

যেভাবে লাক্সারি সাম্রাজ্যের রাজা হলেন বার্নার্ড আর্নল্ট

খান আরাফাত আলী
খান আরাফাত আলী খান আরাফাত আলী , সহ -সম্পাদক , আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
বার্নার্ড আর্নল্ট। ছবি: সংগৃহীত

বিলাসবহুল পণ্যের ব্যবসার কথা উঠলে এতে বানার্ড আর্নল্টের চেয়ে সফল আর কেউ নেই। প্রায় চার দশকের চেষ্টায় বিলাসবহুল পণ্য সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ৭৩ বছর বয়সী এ ফরাসি ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসায়িক গ্রুপ ‘মোয়েত হেনেসি- লুই ভুটন’ বা এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী।

ফ্যাশন, জুয়েলারি, অ্যালকোহলের বাজারে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে পরিচিত কিছু বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের মালিক এলভিএমএইচ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লুই ভুটন, ট্যাগ হিউর, সেফোরা, ডম পেরিগনন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, ফেন্ডি, গিভেঞ্চি, মার্ক জ্যাকবস, স্টেলা ম্যাককার্টনি, লোওয়ে, লোরো পিয়ানা, কেনজো, সেলিন, সেফোরা, প্রিন্সেস ইয়টস, বুলগারি, টিফানি অ্যান্ড কোং প্রভৃতি।

আর্নল্ট শুধু নিজেই যে এ ব্যবসায় জড়িত তা নয়, যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন তার পাঁচ সন্তানও। তাদের নিয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী পরিবারের কর্তা হয়ে উঠেছেন বানার্ড আর্নল্ট।

আরও পড়ুন>> বিশ্বের শীর্ষ ধনীর খেতাব হারিয়েছিলেন ইলন মাস্ক

jagonews24

তিনি কীভাবে এত খ্যাতি ও বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১৯৪৯ সালের ৫ মার্চ ফ্রান্সের রুবাইক্সে এক শিল্পপতির পরিবারে জন্ম নেন আর্নল্ট। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করেছেন প্যারিসের ইকোল পলিটেকনিক থেকে।

পড়াশোনা শেষে ১৯৭১ সালে বাবার নির্মাণ সংস্থা ফেরেট-স্যাভিনেলের নিয়ন্ত্রণ নেন আর্নল্ট। আট বছর পর কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ফেরিনেল ইনকর্পোরেটেড রাখেন এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নজর দেন।

jagonews24

১৯৮৪ সালে আগাচে-উইলট-বুসাক নামে একটি দুর্বল কোম্পানি কিনে নেন আর্নল্ট। ফরাসি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বন মার্চ এবং ফ্যাশন হাউস ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মতো ব্র্যান্ডগুলোর মালিক ছিল এটি। তিনি কোম্পানিটির নাম বদলে ফাইন্যান্সিয়ার আগাচে রাখেন এবং এর কিছু কিছু ব্যবসা বিক্রি ও খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন>> টিকটক দিয়ে বিশ্ব মাত, ৩৮ বছরেই শীর্ষ ধনীর কাতারে

কিছুদিন পরেই তিনি ফ্যাশন হাউস সেলিন কিনে নেন এবং ফরাসি ডিজাইনার ক্রিশ্চিয়ান ল্যাক্রোইক্সের পেছনে টাকা ঢালতে শুরু করেন।

jagonews24১৯৮৮ সালে এলভিএমএইচের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেন শেভালিয়ার ও ফিনান্সিয়ার আগাচের সিইও আর্নল্ট। ছবি সংগৃহীত

১৯৮০র দশকের শেষের দিকে এলভিএমএইচের ওপর নজর পড়ে আর্নল্টের। তিনি সংস্থাটির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হওয়ার জন্য ২৬০ কোটি ডলার খরচ করেন এবং ১৯৮৯ সালের মধ্যে এর চেয়ারম্যান ও সিইও হন।

আরও পড়ুন>> রোনালদোর চেয়ে ৯ গুণ ধনী পর্তুগালের যে পরিবার

১৯৭৩ সালে অ্যান ডেওয়াভ্রিনকে বিয়ে করেন আর্নল্ট। ১৯৯০ সালে বিচ্ছেদের আগে তাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্ম নেয়। ১৯৯১ সালে কানাডিয়ান পিয়ানোবাদক হেলেন মার্সিয়ারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন এ ফরাসি ব্যবসায়ীর। এই সংসারে আরও তিনটি সন্তান রয়েছে আর্নল্টের।

jagonews24হেলেন মার্সিয়ার এবং বার্নার্ড আর্নল্ট। ছবি সংগৃহীত

তার বড় মেয়ে ডেলফাইনকে এলভিএমএইচ সাম্রাজ্যের পরবর্তী প্রধান হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন পরামর্শক ফার্ম ম্যাকিনসলে অ্যান্ড কোং-এ ক্যারিয়ার শুরু করা ডেলফাইন বর্তমানে লুই ভুটনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন>> বাবার ক্যানসারে ভার্সিটি ছেড়েছিলেন, আজ সুইজারল্যান্ডের শীর্ষ ধনী

আর্নল্টের প্রথম সংসারের দ্বিতীয় সন্তান আন্তোইন পুরুষদের পোশাকের ব্র্যান্ড বেরলুতির প্রধান নির্বাহী এবং লোরো পিয়ানার চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালে এলভিএমএইচের যোগাযোগ এবং চিত্রের প্রধান হিসেবেও মনোনীত হন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে সুপার মডেল নাটালিয়া ভোডিয়ানোভার স্বামী আন্তোইন।

jagonews24বার্নার্ড আর্নল্ট এবং ডেলফাইন আর্নল্ট। ছবি সংগৃহীত

বার্নার্ড আর্নল্ট ও হেলেন মার্সিয়ারের ছেলে আলেকজান্ডার এলভিএমএইচের মালিকানাধীন জার্মান লাগেজ ব্র্যান্ড রিমোয়া’র প্রধান নির্বাহী ছিলেন ছিলেন। তবে গত বছর এলভিএমএইচ টিফানি অ্যান্ড কোং কিনে নেওয়ার পর টিফানির পণ্য ও যোগাযোগ বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান তিনি।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের মধ্যে শীর্ষ ধনী শহীদ খান

আলেকজান্ডারের ছোট ভাই ফ্রেডেরিকও এলভিএমএইচের ব্যবসায় জড়িত। ২০১৮ সালে তিনি সংস্থাটির মালিকানাধীন সুইস ঘড়ির ব্র্যান্ড ট্যাগ হিউরের কৌশল ও ডিজিটাল পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। গত জুনে ট্যাগ হিউরের প্রধান নির্বাহী হন ফ্রেডেরিক।

jagonews24প্যারিসে ২০১৮ ফ্রেঞ্চ ওপেনে তিন ছেলের সঙ্গে আর্নল্ট। ছবি সংগৃহীত

২০২১ সালে এলভিএমএইচের সঙ্গে জড়ান আর্নল্টের কনিষ্ঠ পুত্র জিন। অনেকটা নীরবেই লুই ভুটনের মার্কেটিং ও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ২৩ বছরের এ তরুণ।

আরও পড়ুন>> অনলাইনে বইবিক্রেতা থেকে শত কোটির মালিক

অনেক বিলিয়নিয়ারের মতো বানার্ড আর্নল্টও ব্যক্তিগত প্লেনে চলাচল করেন। ফ্রেঞ্চ রিভেরার সেন্ট-ট্রোপেজে একটি বিশাল বিলাসবহুল বাড়ির মালিক তিনি। এছাড়া লস অ্যাঞ্জেলেসে বেভারলি হিলস, ট্রাউসডেল এস্টেট এবং হলিউড হিলস পাড়ায় তার আবাসিক সম্পত্তি রয়েছে বলে শোনা যায়। ফোর্বসের হিসাবে, এই ‍মুহূর্তে ১৮ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের মালিক আর্নল্ট পরিবার।

jagonews24প্রিন্সেস ডায়ানার একপাশে বানার্ড আর্নল্ট ও হেলেন মার্সিয়ার। ছবি সংগৃহীত

ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বানার্ড আর্নল্টকে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির সান্নিধ্যে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রিন্সেস ডায়ানার মতো মানুষও রয়েছেন। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আর্নল্টের ভালো বন্ধু বলে শোনা যায়। স্টিভ একবার আর্নল্টকে বলেছিলেন, ‘৫০ বছর পরেও আইফোন সফল থাকবে কি না জানি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত, তখনো সবাই আপনার ডম পেরিগনন (অ্যালকোহল) পান করবে।’

আরও পড়ুন>> শ্রমিক থেকে পানি ব্যবসায়ী, আজ চীনের শীর্ষ ধনী

সূত্র: ইনসাইডার, ফোর্বস
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন