ইয়াজিদি তরুণীর বর্ণনায় আইএসের যৌন নিপীড়ন
নাদিয়া মুরাদ। বয়স ২১। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের এই তরুণী তিন মাস জিম্মি ছিলেন। এই সময়ে আইএস জঙ্গিরা তাকে ব্যবহার করেছে যৌনদাসী হিসেবে। ভয়ংকর সেই সময়ে চোখের সামনে আইএস জঙ্গিরা তার ছয় ভাই ও মা`কে খুন করেছে। দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেন না তিনি।
সেন্ট্রাল লন্ডনের ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস হাউসে দেওয়া এক বক্তৃতায় আইএস জঙ্গিদের যৌন তাণ্ডব ও নৃশংসতার কথা তুলে ধরেছেন নাদিয়া। বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন। ইরাকে আইএসের সহিংসতার শিকার নারীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। একই সঙ্গে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বে জনমত তৈরিতেও কাজ করছেন। কিভাবে আইএস জঙ্গিরা তার ছয় ভাই ও মাকে খুন করেছে কংগ্রেসে দেওয়া বক্তৃতায় সেটিও বর্ণনা করেছেন।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাদিয়া বলেন, যখন আমি কথা বলছি; তখন শুধু আমার কথাই বলছি না, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের কথা বলছি।
তিনি বলেন, দুই মাস হলো আমি আইএসের সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের জন্য ক্যাম্পেইন শুরু করেছি; শুধুমাত্র ইয়াজিদিরা নয়, সবাই এতে আগ্রহী। ইসলামিক স্টেটের হাতে বর্তমানে পাঁচ হাজার ৮০০ ইয়াজিদি নারী ও শিশু জিম্মি রয়েছে। সিরিয়া এবং ইরাকে এদের অনেকেই আইএসের হাতে খুন হয়েছেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে গৃহহীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
নাদিয়া মুরাদ বলেন, আমাদের জন্য, বিশেষ করে ইয়াজিদিদের জন্য, তারা (আইএস জঙ্গিরা) পুরুষদের হত্যা করছে এবং নারী ও শিশুদেরকে তাদের আস্তানায় নিয়ে যাচ্ছে। তারা ধর্মের নামে খুন, হত্যা, ধর্ষণ সহ সব ধরনের অপরাধ করছে।
তিনি বলেন, জিম্মি থাকা অবস্থায় আইএস জঙ্গিরা নিয়মিত তার ওপর যৌন সহিংসতা চালিয়েছে। জঙ্গিরা পালাক্রমে এ সহিংসতায় মেতে উঠতো।
নাদিয়া বলেন, অনেকেই মনে করেন, এ ঘটনা কঠিন, কিন্তু তারা যা চিন্তা করেন তার চেয়েও অনেক কঠিন এ গল্প। তারা আমার ছয় ভাই ও মাকে হত্যা করেছে। কিন্তু এমন অনেক পরিবার আছে যারা ১০ ভাইকে হারিয়েছে। আইএসের আস্তানায় ৩ হাজার ৪০০ নারী বন্দী আছে। এদের অনেককেই যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছে জঙ্গিরা।
ইরাকের শিনজারে বেড়ে উঠেছেন নাদিয়া। এই শহরে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই গণকবর থেকে শতাধিক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নারী।
এসআইএস/আরআইপি