আবারও সমকামী ইস্যুতে বিতর্ক, যেসব দেশে বৈধতা পেয়েছে বিয়ে
সম্প্রতি ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারে সমকামীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ঘিরে নানা সমালোচনার মুখে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। গত ২১ নভেম্বর সমকামীদের সমর্থনে রংধনু টি-শার্ট পরে স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় এক মার্কিন সাংবাদিককেও আটকে দেওয়া হয়। যদিও পরে তাকে ছেড়ে দেয় কাতার কর্তৃপক্ষ।
দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সমকামী যৌনতা বেআইনি, এটা বাস্তব, কিন্তু বিয়ের বাইরেও সব যৌনতাও তাই। এ ক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘনের জন্য কয়েকটি মামলাও রয়েছে। এ ধরনের রক্ষণশীল কিন্তু কদাচিৎ প্রয়োগ করা আইনগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই, এমনকি প্রায় সব মুসলিম দেশেই প্রচলিত। যেখানে কাতারও এর বাইরে নয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫ সালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে এমন উদ্বেগের জেরে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সমকামী বিয়ের ফেডারেল স্বীকৃতিকে রক্ষা করতে সিনেটে পাস হয় সমকামী বিয়ে সুরক্ষা বিল।
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই বিলটি পাশ করার মাধ্যমে, সিনেট একটি বার্তা পাঠাচ্ছে যা প্রতিটি আমেরিকানকে শুনতে হবে, আপনি যেই হোন বা যে কাউকে ভালোবাসেন না কেন, আপনিও আইনের অধীনে মর্যাদা এবং সমান পাওয়ার যোগ্য।’
সম্প্রতি আবারও আলোচনায় আসেন ভারতের সমকামী জুটি আধিলা নাসারিন ও ফাতিমা নুরা। ‘ওয়েডিং ফটোশুট’ করে সামাজিক মাধ্যমে সেই ছবি প্রকাশ করেন তারা। চলতি বছরের শুরুর দিকে অভিভাবকরা আলাদা করার চেষ্টা করলে কেরালা রাজ্যের একটি আদালত তাদের পক্ষেই রায় দেন। পরিবার থেকে বেরিয়ে আসার পর সমস্যার মুখে পড়ায় প্রতিকার চাইতে আদালতের দ্বারস্থ হন তারা। পরে নুরা ও নাসারিনকে একসঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছেন কেরালার আদালত। তবে তারা বিয়ে করে একত্রে থাকার অনুমতি পাননি।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক দশকের আইনি বিতর্কের পর ২০১৮ সালে ব্যাখ্যা দেন সমকামী বিয়ে কোনো অপরাধ নয়। গত কয়েক বছরে সচেতনতা বাড়লেও ভারতীয় সমাজে এখনও সমকামী বিয়ের আইনি কোনো ভিত্তি নেই। তবে দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বৈধতার আবেদন বিবেচনাধীন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশ সমকামী বিয়ের বৈধতা দিয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি দেশে এ অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছেন অনেকেই।
নেদারল্যান্ডস বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়। ২০০০ সালে বৈধতা পাওয়ার পর ২০০১ সালে প্রথম সমকামী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে।
কলম্বিয়ার সরকার ২০১৬ সালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়। ২০১৫ সালে গণভোটের মাধ্যমে আয়াল্যান্ডে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয়। স্কটল্যান্ডে সমকামী বিয়ে বৈধ হয় ২০১৪ সালে।
ফিনল্যান্ডে সমকামী বিয়ে বৈধ হয় ২০১৫ সালে। লুক্সেমবার্গে ২০১৪ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়। গ্রিনল্যান্ডে বৈধতা পায় ২০১৫ সালে। ফ্রান্সে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। ইংল্যান্ডেও বৈধতা দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। একই সময়ে ব্রাজিলেও বৈধ হয় এই বিয়ে।
২০১৩ সালে উরুগুয়েতে বৈধতা পায় সমকামী বিয়ে। ২০১২ সালে ডেনমার্কে বৈধ করা হয় সমকামী বিয়ে। ২০১০ সালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয় আইসল্যান্ড। ২০১০ সালে পর্তুগালেও বৈধ হয় এই বিয়ে। একই সময়ে আর্জেন্টিনাতেও সমকামী বিয়ে বৈধ হয়।
২০০৯ সালে সুইডেনে বৈধ হয় সমকামী বিয়ে। ২০০৮ সালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয় নরওয়ে। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এ বিয়ের বৈধতা দেয়। ২০০৫ সালে স্পেনে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ হয়। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়। ২০০৩ সালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয় বেলজিয়াম। কানাডাও বৈধতা দেয় ২০০৫ সালে।
অস্ট্রেলিয়াতেও ভোটাভুটির মাধ্যমে সমকামী বিয়ের বৈধতার বিল পাস হয়। ২০১৭ সালে অস্ট্রিয়ার সাংবিধানিক আদালত সমকামী বিয়ের পক্ষে রায় দেন। পরে ২০১৯ সাল থেকে তা কার্যকর হয়। ২০১৭ সালে জার্মানিতেও সমকামী বিয়ে বৈধতা দেওয়া হয়। মাল্টায় ২০১৭ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় যদিও এর বিরোধীতা করেছিল ক্যাথলিক চার্চ।
২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সমকামী বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বলিভিয়া। কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ট্রান্সজেন্ডারদের বিভিন্ন অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া শুরু করে। অবশেষে ২০২০ সালে আবারও সমকামী বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয় দেশটিতে।
এশিয়ার প্রথম হিসেবে তাইওয়ান ২০১৯ সালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দিয়ে একটি আইন পাস করে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে, বিবিসি, রয়টার্স
এসএনআর/জেআইএম