নেদারল্যান্ডসে দেখার মতো কী কী রয়েছে?
ইউরোপের উত্তরপশ্চিম অংশের ছোট্ট সুন্দর একটি দেশ নেদারল্যান্ডস। এটিকে হল্যান্ড বলেও ডাকেন কেউ কেউ। দেশটির লোকদের বলা হয় ডাচ। ফুটবলের দুনিয়ায় ডাচদের দাপট বহুদিনের। যদিও আজপর্যন্ত বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে নেওয়া হয়নি তাদের। তবু বিশ্বব্যাপী নেদারল্যান্ডস ফুটবল দলের ভক্তের অভাব নেই, বাংলাদেশেও পাওয়া যাবে কিছু কিছু।
নেদারল্যান্ডসের আয়তন মাত্র সাড়ে ৪১ হাজার বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা সবমিলিয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখের মতো। কিন্তু আয়তন-জনসংখ্যায় ছোট হলেও অর্থনীতি ও পর্যটনের কারণে ডাচদের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। দেশটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। এককথায়, ভ্রমণের জন্য দারুণ জায়গা নেদারল্যান্ডস।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক নেদারল্যান্ডসের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান কোনগুলো-
১. আমস্টারডামের খাল
নিঃসন্দেহে দেশটির সেরা ভ্রমণস্থান আমস্টারডাম। এটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর বলে পরিচিত। ভেনিসের মতো আমস্টারডামেরও অবিচ্ছদ্য অংশ এর খালগুলো। বিশেষ করে জর্ডান এলাকাটি পর্যটকদের জন্য সেরা আকর্ষণীয় স্থান। খাল বেয়ে শহরের বেশিরভাগ জায়গায় চলাচল করা যায়। আমস্টারডামের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থাপনাগুলো এসব খালের আশপাশেই অবস্থিত। এখানকার রাস্তার পাশে দোকানগুলোর খ্যাতিও বিশ্বজোড়া।
২ কেউকেনহফ
নেদারল্যান্ডসের কথা শুনলে অনেকের চোখেই প্রথমে ভেসে ওঠে দিগন্তজোড়া টিউলিপ বাগানের কথা। এই দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে আমস্টারডাম থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের দূরত্বে লিসে শহরে। সেখানেই রয়েছে বিখ্যাত কেউকেনহফ বোটানিক্যাল গার্ডেন। ফুলের সমারোহের কারণে এটিকে ‘গার্ডেন অব ইউরোপ’ও বলা হয়ে থাকে। ৭০ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত কেউকেনহফে সাতশ’র বেশি প্রজাতির টিউলিপের দেখা মিলবে। এখানে যাওয়ার সেরা সময় এপ্রিল ও মে মাস। তবে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বছরই টিউলিপের দেখা মিলবে কেউকেনহফে।
৩. রিজক্স মিউজিয়াম
১৮০৯ সাল থেকে বিরল ও প্রাচীন শিল্পকর্ম সংগ্রহ করছে আমস্টারডামের রিজক্স মিউজিয়াম বা জাতীয় জাদুঘর। ফলে আজ সেখানে শিল্পকর্মের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ লাখ। জাদুঘরের ২৫০টি রুমে রয়েছে পাঁচ হাজারের মতো পেইন্টিং। বিশাল লাইব্রেরিতে রয়েছে অন্তত ৩৫ হাজার বই।
৪. ঐতিহাসিক বিনেনহফ, দ্য হেগ
বিশ্ববাসীর কাছে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের অবস্থান হিসেবে পরিচিত জায়গাটি নেদারল্যান্ডসেরও রাজনৈতিক কেন্দ্র। এখানেই দেশটির সরকার তার কার্যক্রম চালায়। এছাড়া, ডাচ রাজপরিবারের বাসভবন ঐতিহাসিক নুরডিন্দে প্রাসাদও এই এলাকায়।
৫. অ্যান ফ্রাঙ্ক হাউস, আমস্টারডাম
আমস্টারডামে গেলে অ্যান ফ্রাঙ্ক হাউজ অবশ্যই দেখে নেবেন। এই বাড়িতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে ছিল অ্যানের পরিবার (তারা ফ্রাঙ্কফুর্টের ইহুদি উদ্বাস্তু ছিলেন)। এই বাড়িতে বসেই অ্যান তার বিখ্যাত ডায়েরি লিখেছিলেন। যদিও যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই মাস আগে মেয়েটি মারা যায়, তবে তার দুঃসহ স্মৃতিগুলো ওই ডায়েরির মাধ্যমে আজও বেঁচে রয়েছে। অ্যানের ডায়েরি অন্তত ৫১টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
৬. ওডে হ্যাভেন, রটারডাম
আমস্টারডাম থেকে ট্রেনে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত রটারডাম। বন্দর শহরটি সংরক্ষিত ওল্ড হারবার বা ওড হ্যাভেনের জন্য বিখ্যাত। রটারডামের রয়েছে দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ইতিহাস। এর ভেতর দিয়ে গেছে রাইনের শাখানদী নিউয়ে মাস। তাছাড়া, ইংলিশ চ্যানেলের খুব কাছেই শহরটির অবস্থান।
৭. ভ্যান গগ মিউজিয়াম, আমস্টারডাম
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন মনে করা হয় ভ্যান গগকে। তার স্মৃতিচিহ্নে ভরপুর আমস্টারডামের ভ্যান গগ মিউজিয়াম বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা শিল্পকর্ম জাদুঘর। ভ্যানগগের পেইন্টিংয়ের বৃহত্তম সংগ্রহশালা এটি। প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ দর্শক আমস্টারডামের এই জাদুঘর পরিদর্শনে যান।
৮. কিন্ডারডিজকের উইন্ডমিলস
রটারডাম ও ডোরড্রেখটের মধ্যে নুর্ড নদীর তীরে অবস্থিত বিখ্যাত গ্রাম কিন্ডারডিজক। এখানে ১৮ শতকের উইন্ডমিলগুলো দারুণভাবে সংরক্ষণ করে রাখা। কিন্ডারডিজকের ১৯টি উইন্ডমিল নির্মিত হয়েছিল ১৭২২ থেকে ১৭৬১ সালের মধ্যে। বর্তমানে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এটি।
৯. ডি হোগে ভেলুই ন্যাশনাল পার্ক
অনেকেই শুনে অবাক হবেন, নেদারল্যান্ডসের মতো ছোট্ট একটি দেশে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় জাতীয় উদ্যান কর্মসূচি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো ডি হোগে ভেলুই ন্যাশনাল পার্ক। প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ একর জুড়ে এর অবস্থান। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নেদারল্যান্ডসের অন্যতম সেরা আকর্ষণীয় জায়গা এটি।
১০. ক্যাথেড্রাল স্কোয়ার, ইউট্রেখট
একাধিক ঐতিহাসিক ভবন সমৃদ্ধ জনপ্রিয় পর্যটন শহর এটি। ক্যাথেড্রাল স্কোয়ার অত্যন্ত পথচারী-বান্ধব। তাই হেঁটে হেঁটেই দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। বিখ্যাত সেন্ট মার্টিন ক্যাথেড্রাল বা ডোম চার্চ এই শহরেই অবস্থিত।
আরও পড়ুন>> সার্বিয়া সম্পর্কে যা জানা যায়
সূত্র: প্ল্যানেট ওয়্যার ডটকম, উইকিপিডিয়া
কেএএ/