করোনা মহামারির ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত দেখলো চীন
উৎপত্তির পর চলতি মাসেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখলো চীন। বুধবার (২৩ নভেম্বর) করোনার উৎপত্তিস্থল ও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দেশটিতে ৩১ হাজার ৪৫৪ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, একদিনের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য নিশ্চিত করে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। তারপর এ বছরের এপ্রিলে দেশটিতে একদিনে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন ২৯ হাজার ৩৯০ জন। বুধবার পর্যন্ত এটিই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত।
এদিকে সোমবার চীনে ২৮ হাজার ১২৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, যা গত এপ্রিলে দৈনিক সংক্রমণের প্রায় কাছাকাছি। মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ের বিভিন্ন পার্ক ও জাদুঘর বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। এর আগে বেইজিংয়ের স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ায় চীনের বৃহত্তর শহর গুয়াংজু লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। গুয়াংজু হলো গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী।
২০১৯ সালে চীনের পর খুব দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। ২০২০ সাল থেকে ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণহানি শুরু হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি সারাবিশ্বে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় একই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
মহামারি শুরুর দিকে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করে চীন। দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ, টিকাদান ও মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করাসহ কঠোর সব বিধি চালু করে শি জিনপিং সরকার।
চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশ করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শীথিল ও বাতিল করলেও, স্বাস্থ্যবিধিগুলো জারি রাখে চীন। শুধু তাই নয় করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে চীন।
জিরো কোভিড নীতির আওতায় কোনো শহরে কিছু মানুষের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হলেই পুরো শহরটিতে লকডাউন জারি করা হচ্ছে। অনেকের মতে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের এ সংখ্যা তুলনামূলক নগন্য হলেও, জিরো কোভিড নীতি প্রণয়ন করেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারাটা চরম ব্যর্থতা।
অনেক চীনা নাগরিকের দাবি, জিরো কোভিড নীতির জন্য চীনের জনগণ একদিকে যেমন স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়তে পারে দেশটি।
তাছাড়া, দিনের পর দিন ঘরে অবস্থান করতে হচ্ছে বলে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য চীনা নাগরিক। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র: আল জাজিরা, সিএনএন
এসএএইচ