দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
বিজয়ী হতে চান ভ্লাদিমির পুতিন
অনেকেই মনে করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যে হামলা করেছেন তা প্রত্যাশিত ছিল। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই এমন লক্ষণ দেখা যায়। পুতিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল কৃষ্ণসাগরকে ছাপিয়ে যাওয়া। তবে সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, পুতিনের যুদ্ধ জয়ের বিষয়টি আন্তর্জাতিক প্রবণতার বাইরে। কারণ ১৯৭৫ সালের পর কোনো দেশ সম্পূর্ণভাবে অন্য একটি দেশ দখল করতে পারেনি।
সারাবিশ্বেই যুদ্ধ একটি প্রচলিত বিষয়। ইরাকে আগ্রাসন, আফগানিস্তান যুদ্ধ ও সাব সাহারান অঞ্চলের গৃহযুদ্ধ সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কিন্তু মাত্রা ও বস্তুগত দিক দিয়ে পুতিনের যুদ্ধ সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যদেশ জয় করতে গিয়ে বিশ্বকে আগের রক্তক্ষয়ী সময়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জয়ের প্রচেষ্টা ও মাত্রার সংখ্যা দীর্ঘদিন ধরে হ্রাস পেয়েছে। যুদ্ধ জয় অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ছে। যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যগুলো প্রতিষ্ঠা করা সবসময় সহজ নয়।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত পঞ্চাশ বছরে যুদ্ধ জয়ের প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তাছাড়া হামলাকারীদের আকাঙক্ষায়ও পরিবর্তন এসেছে।
প্রশ্ন উঠেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে কী করার চেষ্টা করছেন। সবশেষ ১৯৯০ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুর জয় করেছিল ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি। ২০০২ সালে পূর্ব তিমুর স্বাধীন হয়ে যায়। আরও পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫০ সালের দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ ও ১৯৭৪ সালে ভিয়েতনামের ইস্যু। ১৯৪৬ সালের পর ১১ বার অন্যদেশের ভূমি দখলের চেষ্টা হয়, যার মধ্যে মাত্র তিনটি সফল হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কিয়েভ দখলের চেষ্টা থেকে সরে এসেছেন তিনি। তাছাড়া সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার হাত থেকে খেরসনকে দখল মুক্ত করেছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না যে পুতিন সেখানে জয়ী হতে পারবেন। বরং রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয়দের হাজার হাজার জীবন উৎসর্গের জন্য তিনি দায়ী থাকবেন এবং নেতিবাচকভাবে ইতিহাসের পাতায় স্বরণীয় হয়ে থাকবেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যদিও খেরসনকে দখল মুক্ত করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। এই যুদ্ধের শেষ পরিণতি সম্পর্কে এখনো কেউ সম্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারছে না।
দ্য ইকোনমিস্টের আলোকে অনুবাদ করেছেন শাহিন মিয়া
এমএসএম/জিকেএস