ফুটবলের বাইরেও বিশাল আয়োজন কাতারে
কাতারে আর কয়েকদিন পরেই শুরু হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২২। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দেখতে উপসাগরীয় দেশটিতে ছুটে যাচ্ছেন লাখ লাখ ফুটবলপ্রেমী। তবে কাতারের এই আয়োজন কেবল পৃথিবীর সেরা ৩২টি ফুটবল দলের লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ নয়; বিশ্বের বিখ্যাত অনেক বিনোদনতারকার মনোজ্ঞ পারফরম্যান্সও সেখানে দেখতে পারবেন দর্শকেরা।
ধারণা করা হচ্ছে, সরাসরি স্টেডিয়ামে ও টেলিভিশন সেটের সামনে বসে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল দেখবেন অন্তত ৫০০ কোটি মানুষ। অর্থাৎ, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে কাতারের নাম। তাই বিশ্বকাপের আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবর অনুসারে, ১২ বছর আগে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণা হওয়ার পরপরই বিশাল প্রস্তুতি শুরু করে দেশটি। এরপর থেকে সেখানে কয়েক ডজন হোটেল, অবকাশযাপন কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। গড়ে উঠেছে বিনোদনের নতুন নতুন ভেন্যু, সৈকত, রিসোর্ট, জাদুঘর, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি। আর এসবই করা হয়েছে কেবল বিশ্বকাপ প্যাকেজের অংশ হিসেবে।
অতিথিদের জন্য ১৬টি ভাসমান হোটেল তৈরি করেছে কাতার। ছবি সংগৃহীত
পর্যটকদের জন্য কাতারে এখনই অন্তত তিনটি সংগীত উৎসব চলছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যান্ড ব্ল্যাক আইড পিস, ডাচ ডিজে আরমি ভ্যান ব্যুরেনের পারফরম্যান্স দেখার সুযোগ পাবেন ভক্তরা।
গত শুক্রবার দোহা গলফ ক্লাবে পারফর্ম করেছেন স্প্যানিশ সংগীততারকা এনরিক ইগলেসিয়াস। ওই একই ভেন্যুতে ব্লাক আইড পিসকেও দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কাতারের এই বিশাল সাংস্কৃতিক আয়োজনের কেন্দ্রে রয়েছে আর্কেডিয়া ফেস্টিভ্যাল। এতে ১০০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক শিল্পী পারফর্ম করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর, অর্থাৎ ফাইনাল ম্যাচের পরের দিন পর্যন্ত।
আর্কেডিয়া ফেস্টিভ্যালে রয়েছে ৫০ টন ওজনের মাকড়সা-আকৃতির মঞ্চ। ছবি সংগৃহীত
এই ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে থাকছে তিনটি সুদৃশ্য মঞ্চ। এর মধ্যে একটি সাজানো হয়েছে সুবিশাল মাকড়সার আকারে, যাতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেজারের ব্যবহারও।
এছাড়া, বিখ্যাত দোহা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডেড্রিম ফেস্টিভ্যাল। সেখানে ডাচ ডিজে তিয়েস্তো, সুইডিশ ডিজে অ্যালেসো, জার্মান ডিজে এটিবি এবং পল ভ্যান ডাইকের ইলেক্ট্রনিক পারফরম্যান্স দেখা যাবে।
কাতারের আইকনিক ইসলামিক আর্ট জাদুঘর আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে গত মাসে। দর্শনার্থীদের জন্য ২০২২ সালে চালু হওয়া একঝাঁক নতুন স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ৩-২-১ কাতার অলিম্পিক ও ক্রীড়া জাদুঘরও।
দোহা গলফ ক্লাবে পারফর্ম করছেন এনরিক ইগলেসিয়াস।। ছবি সংগৃহীত
ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১২ লাখের বেশি মানুষ কাতার যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ২৯ লাখ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
এসব ভ্রমণকারীর রাতযাপনের জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল রুম, মরুভূমি ক্যাম্প, ভিলা, ফ্যান ভিলেজ, এমনকি নোঙ্গর করা ক্রুজ শিপে কেবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান বা ইরানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে থাকার বিকল্প জায়গা হিসেবে বেছে নেবেন। তারা কাতারে ফুটবল ম্যাচ দেখেই যেন ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য ‘শাটল’ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
The air show, with the participation of the Amiri Air Force, the Saudi Falcons Team, and the British Royal Air Force Aerobatic Team took place in the West Bay and Doha Corniche .#QNA pic.twitter.com/ctkg13eArt
— Qatar News Agency (@QNAEnglish) November 5, 2022
বিশ্বকাপ উন্মাদনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে এরই মধ্যে কাতারে পৌঁছাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন দেশের দর্শক বা ফুটবলপ্রেমীরা। ছোট্ট দেশটিতে বর্তমানে বিদেশি প্রবেশের হার পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কেবল গত সেপ্টেম্বর মাসেই ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ কাতারে প্রবেশ করেছেন।
কাতার পর্যটন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, প্রবেশকারী বিদেশিদের মধ্যে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল বা জিসিসি-ভুক্ত অন্য দেশগুলো থেকেই গেছেন প্রায় ৪৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ ভ্রমণকারী গেছেন সৌদি আরব থেকে।
কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্বকাপ চলাকালে বিশাল পরিসরে সাংস্কৃতিক আয়োজন ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। ফুটবল ম্যাচের পাশাপাশি দেশব্যাপী উৎসবে ৯০টিরও বেশি বিশেষ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান ইভেন্টগুলোর মধ্যে থাকবে জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা, সঙ্গীত উৎসব, সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও স্ট্রিট পারফরম্যান্স।
দোহা কর্নিশে যানবাহন নিষিদ্ধ, থাকছে কার্নিভালের আমেজ। ছবি সংগৃহীত
বিশ্বকাপ উপলক্ষে চলতি মাসের শুরু থেকে রাজধানী দোহার বিখ্যাত কর্নিশকে (সমুদ্রের তীরবর্তী রাস্তা) কেবল হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথজুড়ে থাকবে কার্নিভালের পরিবেশ; যেখানে ঘোরাঘুরির সুযোগ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খাদ্য ও পানীয়ের স্টল এবং খুচরা বিক্রেতাদের নানা আউটলেটের ব্যবস্থা থাকবে।
বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর কথা মাথায় রেখে বিশ্বকাপ আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে ৫০ হাজার নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করছে কাতার। এর জন্য তারা মরক্কো, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ন্যাটোসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে।
কেএএ/