কঠিন হয়ে উঠছে খেরসনের পরিস্থিতি: রুশ জেনারেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার স্বীকার করেছেন যে, খেরসনের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তিনি শহর ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল সেরগেই সুরুভিকিন বলেছেন, ইউক্রেনের সৈন্যদের ছোঁড়া হিমার্স রকেট শহরের অবকাঠামো এবং বাড়ি-ঘরে আঘাত হেনেছে। খবর বিবিসির।

তিনি বলেছেন, খেরসনের বাসিন্দাদের নিরাপদে শহর ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সব রকম সহায়তা করবেন ‍রুশ সৈন্যরা। জেনারেল সুরুভিকিন বলেন, বিশেষ সামরিক অভিযানের পুরো এলাকাজুড়েই উত্তেজনা রয়েছে।

তার এই বক্তব্য ইউক্রেনে হামলা চালানো রুশ সৈন্যদের সংকটে থাকার বিরল স্বীকারোক্তি। এর আগে স্থানীয় শীর্ষ একজন কর্মকর্তাও এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। রুশ সমর্থিত আঞ্চলিক কর্মকর্তা কিরিল স্তেরেমোসভ এর আগে খেরসনের বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেছিলেন যে, খুব তাড়াতাড়ি ইউক্রেনের সৈন্যরা খেরসনে হামলা চালানো শুরু করবে।

টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, আমার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। আমি পরামর্শ দিচ্ছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহর ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, দানিয়েপার নদীর পশ্চিম তীরে যারা আছেন, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু পর খেরসন শহরটি প্রথম দখল করেছিল রাশিয়া। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে আশেপাশের এলাকা পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তারা এখন দানিয়েপার নদীর দক্ষিণে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। ফলে সেখানে থাকা রাশিয়ার সৈন্যদের ফাঁদে আটকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

হামলা শুরুর পর রাশিয়ার দখলে নেওয়া ইউক্রেনের একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী খেরসেন। ক্রেমলিন এখন দাবী করছে, খেরসেন এবং ইউক্রেনের অন্য তিনটি এলাকা রাশিয়ার অংশ হয়ে গেছে। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আঞ্চলিক সম্প্রদায়। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার পর ইউক্রেনের সহস্রাধিক শহর ও গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গত ৮ দিনে রাশিয়ার হামলায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি মঙ্গলবারের হামলার পর কিয়েভের কিছু অংশ বিদ্যুৎ এবং পানিবিহীন রয়েছে।

ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র ওলেকসান্দির খোরুনযায়ি বলেছেন, অক্টোবরের ৭ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় চালানো হামলায় ১১টি অঞ্চলের প্রায় চার হাজার বসতি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে এক হাজার ১৬২টি বসতি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। অপরদিকে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সমুদ্রের তলদেশের যে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, সেই নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের অন্তত ৫০ মিটার (১৬৪ ফিট) গত মাসের একটি বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেছে।

নরওয়ের একটি রোবট কোম্পানির তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই স্থানটি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ওই ভিডিও প্রকাশ করেছে সুইডেনের সংবাদ মাধ্যম এক্সপ্রেসেন। ডেনমার্কের পুলিশ ধারণা করছে, শক্তিশালী বিস্ফোরণে পাইপলাইনে চারটি গর্তের তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে কাছাকাছি থাকা নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই ঘটনার পেছনে অন্তর্ঘাতের ধারণা করা হলেও কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে বা কারা এর পেছনে রয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে পাইপলাইনে বিস্ফোরণের কারণে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

প্রথমে ওই বিস্ফোরণের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছিলেন পশ্চিমা নেতারা। যদিও পরবর্তীতে সেই অবস্থান থেকে তারা সরে আসেন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সাধারণ যুক্তিতে বলা যায়, পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা রাশিয়ার স্বার্থের সঙ্গে যায় না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।