পশ্চিমাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাশিয়াকে আরও ড্রোন-মিসাইল দিচ্ছে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২২
ইরানের একটি ভূগর্ভস্থ স্থানে রাখা সামরিক ড্রোন। ছবি সংগৃহীত

পশ্চিমা হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে রাশিয়াকে আরও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান। দেশটির দুই কর্মকর্তা ও দুই কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তেহরানের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই পশ্চিমা শক্তিগুলো প্রচণ্ডভাবে ক্ষিপ্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খবরে বলা হয়েছে, গত ৬ অক্টোবর ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার, বিপ্লবী গার্ডের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা মস্কো সফরকালে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়।

সফর সম্পর্কে অবগত এক ইরানি কূটনীতিক বলেছেন, রাশিয়া আরও ড্রোন এবং উন্নত নির্ভুলতা সুবিধাযুক্ত ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছে; বিশেষ করে, ফাতেহ এবং জোলফাগার পরিবারের ক্ষেপণাস্ত্র।

এ বিষয়ে অবগত এক পশ্চিমা কর্মকর্তা তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেছেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে জোলফাগারসহ সারফেস-টু-সারফেস স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের জন্য চুক্তি হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের এই অস্ত্র সরবরাহ চুক্তির ফলে ২০১৫ সালের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘন হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা। তবে সেই দাবি অস্বীকার করেছে তেহরান।

ইরানি কূটনীতিক বলেন, এগুলো (ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র) কোথায় ব্যবহার হচ্ছে তা বিক্রেতার জানার বিষয় নয়। ইউক্রেন সংকটে আমরা পশ্চিমাদের মতো কারও পক্ষ নিচ্ছি না। আমরা কূটনৈতিক উপায়ে সংকটের অবসান চাই।

ইউক্রেন দাবি করেছে, দেশটিতে সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়া। ইরান অবশ্য শুরু থেকেই রাশিয়াকে কামিকাজে বা আত্মঘাতী ড্রোন সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে। ক্রেমলিনও ইরানি ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

jagonews24

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে রাশিয়া ইরানি ড্রোন ব্যবহার করেছে কি না জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বলেছেন, এগুলো ব্যবহারের বিষয়ে ক্রেমলিনের কাছে কোনো তথ্য নেই।

এ বিষয়ে আরও প্রশ্ন থাকলে তা রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে এ নিয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

অস্ত্র পৌঁছাবে শিগগির
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, গত সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলার সময় ইরানি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়েরেও তেহরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ এনেছেন।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, তাদের মূল্যায়ন বলছে, রাশিয়া তার শিল্প খাতে নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজেরা অস্ত্র তৈরি করা আরও কঠিন বলে মনে করছে। সে কারণেই ইরান-উত্তর কোরিয়ার মতো অংশীদারদের কাছ থেকে অস্ত্র আমদানির দিকে ঝুঁকছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় চাপা পড়া ইরানের শাসকরা রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, মার্কিন-সমর্থিত উপসাগরীয় আরব-ইসরায়েল জোটের সম্পর্ক বৃদ্ধি তেহরানকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

ইরানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, তারা (রাশিয়া) আমাদের কাছ থেকে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি, তাদের দাবি করা জোলফাগার ও ফাতেহ-১১০ স্বল্পপাল্লার কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র শিগগির পাঠাতে পারবো।

তিনি বলেন, আমি সঠিক সময় বলতে পারছি না। তবে খুব শিগগির সেগুলো দুই থেকে তিনটি চালানে পাঠানো হবে।

আরেক ইরানি কূটনীতিক বলেছেন, মস্কো বিশেষভাবে সারফেস-টু-সারফেস স্বল্পপাল্লার ফাতেহ-১১০ এবং জোলফাগার ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য বলেছিল এবং চালানটি সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে দিতে হবে।

রাশিয়ার অস্ত্র গতিবিধির ওপর নজরদারি করা এক পূর্ব ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেছেন, এরকম অস্ত্র চুক্তি যে ঘটছে, তা তারা বুঝতে পেরেছিলেন। যদিও এর পক্ষে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।

রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহের অভিযোগে সোমবার ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সদস্য দেশ। এছাড়া ইরানে চলমান অস্থিরতার কারণেও তেহরানের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে এই জোট।

কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।