ইচ্ছে হয় বই কিনতে, তবে...

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মলিন চেহারা, ঝলমলে চোখে যেন গভীর স্বপ্ন। নতুন বইয়ের পাতা থেকে সরছে না চোখ। বার বার বইয়ের পাতা উল্টে-পাল্টে দেখছে ছোট্ট শিশুটি। নিষ্পাপ হাতের ছোঁয়া বুলিয়ে দিচ্ছে নতুন বইয়ের পাতায়। আর বড় বড় নিশ্বাসে গন্ধ নিচ্ছে নতুন বইয়ের।

তবে বইমেলার স্টলে এভাবে সময় ব্যয় করার মতো সময় নেই তাই। ফিরতে হবে অন্যদিকে। বিক্রি করতে হবে শিশুদের খেলনা সামগ্রী। মা-বোনের মুখে হাসি ফোটবে তার বিক্রিতে। তাই তো শাহবাগ, টিএসসি, চারুকলা ও বাংলা একাডেমি ঘিরেই চলছে ১০ বছরের শিশু তারেক মিয়ার জীবন গাড়ি। অন্য দশটা শিশু বাবা-মায়ের হাত ধরে ব্যাগ ভর্তি নতুন বই নিয়ে যখন বাসায় ফিরছে, তখন তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তারেকের।

সোমবার অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দেখা হয় তার সঙ্গে। নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলে- তারেক মিয়া। বাড়ি হবিগঞ্জ। পাড়ার মাদ্রাসাতে ক্লাস ওয়ানেই তার শিক্ষা জীবন শেষ। বাবার আয়ে পরিবার চালে না বলেই পড়া-লেখা ছেড়ে দিতে হয়েছে।

Tareq

এখন ঢাকায় হকারের কাজ করছে তারেক। বাড়িতে থাকা মা, দুই বোন এবং ছোট ভাইয়ের মুখে হাসি ফোটাতেই তার এ সাধনা। বাবা আবুল কাসেমও শাহবাগে বেল্ট বিক্রি করেন। বড় ভাইও তার মতো শিশুদের খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে।

সংগ্রামী জীবনের কাহিনী বলতে গিয়ে সে বলে, বাবা ও বড় ভাইসহ থাকে ঢাকার গাবতলিতে। প্রতিদিন সকাল ১১টায় শাহবাগ আসে আর বাসায় ফিরে রাত ৮টার পর। দিনে হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। উপার্জিত অর্থ বাবা-মার হাতে তুলে দেয়। পরিবারের জন্যই পড়া-লেখা ছেড়েছে বলে জানায় সে। তবে এখনো তার ইচ্ছে, কিছুদিন পর আবার বাড়িতে ফিরবে, পড়বে আগের সেই মাদ্রাসাতে।

পড়া-লেখা করে অনেক বড় হওয়ার কথা জানালেও আবার বলে তার বড় হওয়ার ইচ্ছে নেই। মা-বোনের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই তার সুখ। পড়তে না পারলেও বই কিনতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু মা-বোনের মুখে হাসি ফোটাবে কে? বিবেকের কাছে এমন প্রশ্নে বই কেনা থেকে পিছু হটে তারেক।

Tareq

তারেক জানান, তারও ইচ্ছে করে কবিতার বই পড়তে, মজার মজার কার্টুনের বই কিনতে। তবে মা-বোনের মুখে হাসি ফোটাবে কে? সময় পেলেই হাতের ছোঁয়ায় বুলিয়ে নেয় নতুন বইয়ের স্বাদ। কিন্তু নিয়তি তাকে পছন্দের বইটি নিজস্ব করতে সহায়ক হয় না। বইমেলায় নতুন বই কিনে শিশুরা হাসি মুখে বাসায় ফেরে। হাসি ফোটে তারেকেরও।

তার হাসি ফোটে তারই সমবয়সী অন্য শিশুদের খেলনা বিক্রি করে। যেদিন বিক্রি ভালো হয় মনটাও ভালো থাকে। বিক্রি কম হলে মলিন মুখে বাসায় ফিরতে হয়। এই বিক্রির টাকাতেই হবিগঞ্জে থাকা মা, দুই বোন ও এক ভাইয়ের ভাতের যোগান হয়। অমর একুশের বইমেলা ঘিরে হাজারো মানুষের যাতায়াতই এখন তার জীবন জীবিকার প্রধান উৎস।

এমএইচ/আরএস/পিআর

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।