কালীগঞ্জ শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে বই বাণিজ্যের অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে বই বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অ্যাকাডেমিক বুক হাউজ নামের একটি বই কোম্পানির কাছ থেকে শিক্ষক সমিতি ডোনেশনের নামে ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক মহল ও সচেতন জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা বাধ্যতামূলকভাবে সিলেবাসে অ্যাকাডেমিক  বুক হাউজের বই অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি তারা ঝিনাইদহের পূবালী ব্যাংক থেকে বই কোম্পানির অগ্রিম পাঠানো ডোনেশনের নামে সাত লাখ টাকা উৎকোচ উত্তোলন করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বাকি টাকা চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে পরিশোধ করবে বই কোম্পানি।  

এছাড়া সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষিদ্ধ অনুপম কোম্পানির অনুপম গাইড কিনতেও বাধ্য করছেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাকাডেমিক বুক হাউজের অ্যাকাডেমিক স্পেশাল ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন` এবং অ্যাকাডেমিক বাংলা ব্যাকরণ ও বহু নির্বাচনী ও নির্মিতি` বই জোরপূর্বক সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এসব ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোটি কোটি টাকার বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের বই মানসম্মত নয়। এছাড়া ছাপাও অস্পষ্ট। মূলত উক্ত বই কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে এ বই হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার বিকাশ ঘটবে না বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জাগো নিউজকে জানান, একশ` টাকার বইয়ের মূল্য ধরা হয়েছে ৩শ` থেকে ৪শ` টাকা। প্রতিটি বই তাদের এত দাম দিয়ে বাধ্যতামূলক কিনতে হচ্ছে। কোম্পানির কাছ থেকে টাকা খেয়ে শিক্ষকরা এসব বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করাচ্ছেন।

বেশ কয়েকজন শিক্ষক জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিলেবাসে অ্যাকাডেমিক বুক হাউজের ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার বই কিনতে বাধ্য করাচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় হৈচৈ পড়ে যায়। অ্যাকাডেমিক বুক হাউজের নিম্নমানের বই এবং অনুপম প্রকাশনীর অনুপম গাইড বই ছাত্র-ছাত্রীদের কিনতে বাধ্য করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ পারিভন, ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু ও আয়ুব হোসেনসহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি রেজাউল ইসলাম বই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে বলেন, সাক্ষাতে কথা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম এ আরিফ সরকার জাগো নিউজকে জানান, এতে আমার কিছুই করার নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের সকল বই দিয়েছে। নোট বই বা কোম্পানির অন্য কোনো বই বাধ্যতামূলক তাদের পড়ানো যাবে না। এটি অন্যায়। এছাড়া সরকার থেকে এসব বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। যদি এটি করা হয় তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

এমজেড/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।