স্ত্রীর কারণেই কি তীরে এসে তরী ডুবলো ঋষির, প্রশ্ন ভারতীয় মিডিয়ায়
নতুন প্রধানমন্ত্রী পেলো যুক্তরাজ্য। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে হারিয়ে নতুন সরকারপ্রধান হতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ফলাফল অনুসারে, কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রায় ২১ হাজার ভোটে ঋষিকে হারিয়েছেন ট্রাস। অথচ প্রচারণার শুরুর দিকে জরিপে এগিয়ে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রীই। তাহলে তীরে এসে তরী ডুবলো কেন? কেন যুক্তরাজ্য শাসনের সুযোগ হাতছাড়া হলো ঋষির, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির দিকে আঙুল তুলেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।
সোমবার সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋষিকে নিয়ে যুক্তরাজ্যজুড়ে হইচই পড়ে গেলেও তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তিও কম যান না। বরং কিছু ক্ষেত্রে স্বামীকে টেক্কা দিতে পারেন তিনি। কিন্তু তাকে ঘিরেও রয়েছে নানা বিতর্ক।
ঋষির স্ত্রী ছাড়াও একাধিক পরিচয় রয়েছে অক্ষতার। বহুজাতিক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি এবং চেয়ারপারসন সুধা মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তি।
পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার অক্ষতার সঙ্গে ঋষির দেখা হয় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময়। ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তাদের।
চলতি বছরের শুরুতেও আলোচনায় ছিলেন অক্ষতা। সম্পত্তি, আয়কর এবং রাশিয়ার সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক’-এর কারণে যুক্তরাজ্যে তদন্তের মুখে পড়েন তিনি।
যেসব ব্যক্তি বিদেশি নাগরিক, কিন্তু পেশাগত কারণে যুক্তরাজ্যে থাকেন, তাদের একটি বিশেষ কর দিতে হয়। ‘প্রভাব খাটিয়ে’ সেই কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে অক্ষতার বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে ঋষি তার সংস্থার বেশ কিছু শেয়ার অক্ষতার নামে স্থানান্তর করেন। ইনফোসিসেও অংশীদারত্ব রয়েছে অক্ষতার। এই প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে রাশিয়াতেও।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়া থেকে আয় হয় এমন ব্যবসাগুলো সমালোচনার মুখে পড়ে। যুক্তরাজ্যের প্রথম সারির রাজনীতিবিদ হওয়ার সুবাদে স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগের তীর যায় ঋষির দিকে। তবে তিনি তার ও স্ত্রীর রাশিয়ায় ব্যবসা পরিচালানার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
পরে ইনফোসিসের এক মুখপাত্র বলেন, ইনফোসিস রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধকে সমর্থন করে না এবং শান্তির পক্ষে। রাশিয়ায় ইনফোসিসের একটি ছোট দল রয়েছে। সেখান থেকে শুধু আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হয়। রাশিয়ার সঙ্গে এই সংস্থার কোনো সক্রিয় যোগ নেই।
আর অক্ষতার পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি ভারতীয় নাগরিক। তাই বিদেশে কর দিতে বাধ্য নন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, অক্ষতাকে তার আয়ের লভ্যাংশের ওপর কর দিতে হতো। কিন্তু তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা না হওয়ায় এই কর মওকুফ করা হয়েছিল।
ওই সময় অক্ষতার স্বামী ঋষি সুনাক ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার কারণে এ নিয়ে আরও জলঘোলা হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, যুক্তরাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের একাংশ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি।
পরে অক্ষতা এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, মানুষ আমাকে আয়কর দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। আমি যুক্তরাজ্যে আয়ের ওপর নির্দিষ্ট কর ও আন্তর্জাতিক আয়ের ওপর আন্তর্জাতিক কর দিয়েছি। এই ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ বৈধ। তবে যুক্তরাজ্যের নাগরিক নন এমন কতজন এই কর দেন, তা আমার জানা নেই।
সমালোচকদের মতে, ভোটারদের অনেকেই অক্ষতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিতর্কগুলো আজও ভোলেননি। আর তারই প্রতিফলন ঘটেছে ভোটের ফলাফলে, যাতে তীরে এসে তরী ডুবেছে ঋষি সুনাকের।
কেএএ/এমএস