আশরাফুল-মুশফিকরা পারেননি, পেরেছেন মিরাজরা


প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিতর্কটা আগেই শুরু হয়েছিল। অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে বাংলাদেশের কো দলটি সেরা? বিতর্কের ঢাল-পালা গজিয়েছিল অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে বর্তমান অনুর্ধ্ব-১৯ দলটি যেভাবে খেলছিল, তাতে বিতর্ক ওঠাটা স্বাভাবিকই।

তুলনাটা কাদের সঙ্গে! ২০০৬ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছিল বাংলাদেশের মুশফিক, সাকিব, তামিম, শামসুর রহমান, সোহরাওয়ার্দি শুভর মত ক্রিকেটাররা। যারা এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে তুলে নিয়ে এসেছেন। প্রথমবারেরমত যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে তুলে এনেছিল। কিন্তু পঞ্চম স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মুশফিকের নেতৃত্বাধানী দলটিকে। যুব বিশ্বকাপে সাফল্য বলতে ওই টুকুই।

আশা ছিল ২০০৪ সালে নিজেদের দেশে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ নিয়ে। নাফিস ইকবাল, নাজিমুদ্দিন, নাঈম ইসলাম, আফতাব আহমেদ, এনামুল জুনিয়র, শাহাদাত হোসেন রাজিব, ধীমান ঘোষদের নিয়ে গঠিত সেই দলটি নিয়েও প্রত্যাশার বেলুন অকে বেশি ফোলানো হয়েছিল; কিন্তু ছোটদের আসরে সেবার বাংলাদেশের অর্জণ নবম স্থান।

BD

২০০২ সালে বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের লিংকনে। সেই দলটিতে ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। যুব বিশ্বকাপের আগেই যিনি বিশ্বতারকা হয়ে উঠেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ানের গৌরব অর্জণ ততদিনে করে ফেলেছেন আশরাফুল। মুত্তিয়া মুরালিধরন আর চামিন্দা ভাসদের মত বোলারকে মোকাবেলা করে সেঞ্চুরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেই তারকা তকমা নিয়ে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার পর গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়। প্লেট পর্বের সেমিফাইনালে উঠলেও নেপালের কাছে লজ্জাজনক পরাজয়ের ফলে দেশে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতেই।

মেহেদী হাসান মিরাজরা প্রত্যেকটি আসরের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে এবার শুরু করেছিলেন অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। গত দু`বছর ধরে বাংলাদেশের যুব দলটি যেন উড়ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে নিজেদের মাটিতে তো হারিয়েছেই, তাদের মাটিতে গিয়েও ৫-২ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে এসেছে মিরাজরা। শুধুমাত্র ভারতে গিয়েই যা একটু হোঁচট খেতে হয়েছিল। এ ছাড়া ঘরে-বাইরে সমান, দুর্দান্ত একটি দলে পরিণত হয়েছিল মিরাজরা।

তার ওপর বিশ্বকাপ সামনে রেখে নীবিড় অনুশীলন, স্টুয়ার্ট ল`য়ের মত ঝাঁদরেল কোচকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের মতই একটা প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এই বিশ্বকাপের জন্য। সেই প্রত্যাশা কাঁধে নিয়েই বিশ্বসেরার মঞ্চে লড়াই করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মিরাজরা।

উদ্বোধনী ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা। এরপর স্কটল্যান্ডকে ১১৪ রানে এবং নামিবিয়াকে ৬৫ রানে বেধে ফেলার পর ৮ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে মিরাজরা হলো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা পেলো নেপালকে। সেমিতে এক পা যেন তখনই দিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু, সেটা তো নিশ্চিত করে কোনোভাবেই বলা সম্ভব নয়। কারণ, যে নেপাল নিউজিল্যান্ডের মত দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার নিশ্চিত করেছে, তারা কোয়ার্টার ফাইনালে চমক দেখাবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে! সুতরাং, সতর্ক ছিল মেহেদী হাসান মিরাজরা।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যোগ্যতর দল হিসেবেই দারুন লড়াই গড়ে তুলেছিল নেপালি ক্রিকেটাররা। ২১১ রান করার পাশাপাশি ৯৮ রানে বাংলাদেশের ৪ উইকেট ফেলে দিয়ে, প্রথম ৪০ ওভারে রান দেয়ার ক্ষেত্রে কৃপণতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের জয়টাকেই শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল তারা।

কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ প্রমাণ করলেন, অতীত অতীতই। ২০০৬ সালে না হয় মুশফিক ভাই, তামিম ভাই কিংবা সাকিব ভাইরা পারেননি, আমরা পারবো। জাকির হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ১১৭ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে মিরাজ বাংলাদেশকে নিয়ে আসলেন জয়ের বন্দরে। ১০ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিল বাংলাদেশ।

মুশফিক, সাকিব, তামিম, রকিবুল, শামসুর রহমান কিংবা সোহরাওয়ার্দি শুভদের নিয়ে গঠিত  দলটি যা পারেনি, সেটাই করে দেখিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। সে অর্থে বাংলাদেশ দলে কিংবদন্তী হয়ে ওঠা সাকিব-তামিম-মুশফিকদেরই ছাড়িয়ে গেলেন তারা। বাংলাদেশকে তুলে দিলেন প্রথমবারেরমত কোন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।