অশুভ শক্তির খঞ্জরের নিচে বাঙালির শিল্প- সাহিত্য দম আটকে মরবে কেন?
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তধারার শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর ৩২টি বই নিয়ে যে বইয়ের আড়ং বসিয়েছিলেন তা আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বরে দুভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই পথপরিক্রমা মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলনা। তবে সে সময় এর সঙ্গে জড়িতরা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি এই মেলার সঙ্গে অষ্টেপৃষ্ঠে বাণিজ্যচিন্তা জড়িয়ে যাবে!
‘মুক্তধারার প্রথম দুটি প্রকাশনা ছিল ‘বাংলাদেশ কথা কয়’ এবং ‘রক্তাক্ত বাংলা’ নামে দুটি সংকলন গ্রন্থ। চিত্রনির্মাতা ও সাহিত্যিক জহির রায়হান, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি-ঔপন্যাসিক আহমদ ছফাসহ অনেক লেখক-সাংবাদিক কবি যুক্ত হয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহার প্রচেষ্টার সঙ্গে। মুক্তধারা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের ৩২টি বই। ওই ৩২টি বই ছিল বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অভিব্যক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউসের সামনে বটতলায় একটুকরো চটের উপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে একটি বইমেলা শুরু করলেন। সেই থেকেই বাংলা একাডেমির বইমেলার সূচনা।
পরের বছর বাংলা একাডেমি মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমি প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স (যারা বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়নের বইগুলো হ্রাসকৃত দামে বিক্রি করত)। ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। ওই গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমির পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।
১৯৭৫ সালে একাডেমি মাঠের কিছু জায়গা চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। প্রকাশকরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ওই সময় অমর একুশে উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। মেলার তখন নাম ছিল একুশে গ্রন্থমেলা।
১৯৮৪ সাল থেকে এই মেলা মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাড়ানো হয় মেলার পরিসর। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালানুক্রমে বাঙালির প্রাণের বইমেলায় পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের মহামিলন তীর্থে। ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বইমেলার পরিসর বাড়িয়ে এর একটি বড় অংশকে ২০১৪ সাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে অমর একুশের স্মৃতিবাহী এই মেলাটির ঐতিহ্যের বিস্তার ঘটল। এবারও মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বরে দুভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই যে মেলার কলেবর বৃদ্ধি, জনসমাগম বৃদ্ধি, বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, তুলনামূলকভাবে ক্রেতা- পাঠকেরও সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে তার পেছনে বই কিনে জ্ঞানার্জনের চেয়ে বেশি কাজ করেছে আবেগ। মেলাকে ‘প্রাণের মেলা’ ‘অমর শহীদদের স্মৃতি’ ‘বাংলা একাডেমি অমর গ্রন্থমেলা’র মত আবেগি নাম দেয়া এবং সেভাবে চিত্রিত করা। গত কয়েক বছর ধরে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিরেট বাণিজ্যচিন্তা। স্টল ভাড়া দিয়ে যে বিরাট অংকের টাকা আয় করে বাংলা একাডেমি সেই টাকা দিয়ে ফি বছর কি কি জ্ঞানচর্চার বই ছাপেন তারা সে পরিসংখ্যান বেশ পীড়াদায়ক। এক মাসের মেলায় ব্যাংক, বীমা, এনজিও, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, খাবারের দোকান (কবছর ধরে এটা বাইরে দেয়া হয়েছে), বিশ্বব্যাংকরে মত বিদেশি প্রতিষ্ঠন এবং হরেক রকম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে স্টল ভাড়া দিয়েও বিপুল অংকের টাকা আয় করে বাংলা একাডেমি। পকেটভরে লাভ নেয়ার সময় বাংলা একাডেমি একেবারেই একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান, আবার নিরাপত্তা, বিপণন, প্রচার-প্রসার, শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, বিন্যাস এবং সামগ্রিক পরিচালনার বিষয় এলে বাংলা একাডেমি আর একক প্রতিষ্ঠান নয়! তখন তারা এর ওর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিরাপদ থাকতে চায়।
এবার নিরাপত্তার (গতবারের হত্যাকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে) কথা বলে একাডেমির মহাপরিচালক আগে-ভাগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন! তিনি প্রকাশকদের উস্কানিমূলক বই প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন-অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলার সময় লেখকরা যেন মেলার আশেপাশের এলাকায় সাবধানে চলাচল করেন। বই মেলায় এ দুই লেখক ও প্রকাশকের স্মৃতি নিয়ে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কি আয়োজন থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কোনো কিছু করছি না। তাদের প্রকাশনার জন্য স্টল নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারা চাইলে সেখানে তাদের ছবি রাখতে পারে।’ তার মানে তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান (যেটি আসলে দেশের সবার প্রতিষ্ঠান) ওই নিহত দুজনের জন্য কোনো কর্মসূচি রাখবেন না। ‘তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা’ পালন করা যায় কি না এমন প্রস্তাবের জবাবে শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আসবেন। ওইদিনের সব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ দেখবে।’
অর্থাৎ তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন নিহত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে তারা কিছুই করবেন না। অবশ্যি তারা যে করবেন না সেটা তো গত বছরই জানা গেছে। ‘রোদেলা’ নামক প্রকাশনীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় গোঁড়াপন্থীরা অভিযোগ করেছিল ‘তারা ধর্মবিরোধী বই বিক্রি করছে!’ তাদের ‘দাবি’ উঠতে না উঠতে মহাপরিচালক সাহেব তৎক্ষণাৎ রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আর এবার তিনি সেই উগ্রবাদীদের হুমকিকে আগাম প্রশ্রয় দিয়ে (ভালোবেসেও হতে পারে!) মেলায় কোনো ‘উস্কানিমূলক’ বই না প্রকাশ করতে আদেশ দিয়েছেন। কি নিয়ে লিখলে উস্কানি হবে সেটি যেহেতু খুলে বলা হয়নি সেহেতু যে যার মত মনের মাধুরী মিশিয়ে এর-ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে। যেহেতু উস্কানির কোনো মানদণ্ড নেই, যেহেতু কোন মানদণ্ড কোনো পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য, কতটুকু অতিক্রম করলে সেটা উস্কানি হয়ে উঠবে তার দিকনির্দেশনা নেই বলে ছলে-ছুতোয়, কারো উপর বিরাগভাজন হয়েও উস্কানির অভিযোগ উঠতে পারে। উঠতে পারে বলছি কেন? উঠবেই। তখন কি হবে? একের পর এক স্টল বন্ধ করে দেবেন মহাপরিচালক সাহেব? আর স্টল বন্ধ না করলে কোনো অঘটন ঘটলে বাংলা একাডেমি দায়মুক্তি পাবেন আগে সাবধান করার কারণে? এ ভারী অদ্ভুত তুঘলকীয় কাণ্ড!
যে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ‘প্রাণের মেলা; বলা হয়, যে মেলার সঙ্গে গোটা বাঙালি জাতির আবেগ-উচ্ছ্বাস, প্রেম-ভালোবাসা, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার মিশে আছে, যে মেলার পুরো মাসটিজুড়ে বাঙালির প্রাণের আবেগ আর একুশের ভাবগাম্ভির্য্য একাকার হয়ে মিশে থাকে সেই মেলা কেন্দ্র করে যেখানে বাঙালির মননশীলতা, বিজ্ঞানমনষ্কতা, প্রগতিশীলতার চর্চা হওয়ার কথা সেখানে গত কয়েক বছর ধরে মৌলবাদীদের আস্ফালনের ভয়ে (এবং মনে মনে তাদের প্রতি নমণীয় থাকার কারণে) তাদের দেশবিরোধী জাতিবিরোধী পশ্চাদপদ আব্দারকে প্রশ্রয় দিয়ে কার্যত প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞানমনষ্কতা আর মননশীলতার পেছনে কুড়াল মারা হয়েছে। এবার যেন সেই কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকা হল! দেশে যখন একের পর এক ব্লগার, বিজ্ঞানলেখক, প্রগতিশীল প্রকাশক খুন হচ্ছেন সে সময় পুলিশের মহাপরিচালক ‘সংযত’ হয়ে লেখার নসিয়ত করেছিলেন। আর এবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নসিয়ত করলেন- তার ভাষায় ‘উস্কানিমূলক’ বই বা লেখা না প্রকাশ করতে! অথচ সয়ং এই প্রতিষ্ঠানটিরই দায়িত্ব ছিল প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞানমনষ্কতা আর মননশীলতার চর্চা সারা দেশময় ছড়িয়ে দেয়ার! তারা নিজেরা সেটি তো করলেনই না উল্টে আর কেউ যেন না করে সে ব্যবস্থা চূড়ান্ত করলেন।
পৃথিবীর সকল বই মেলা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বিশ্বের সবচেয়ে নাম করা এবং বৃহৎ কলেবরের বইমেলা জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা। সেটি তো বটেই, আমাদের বাড়ির ধারের কলকাতা বইমেলাও আন্তর্জাতিক বইমেলা। সেখানে বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশের বই বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি বছরই তারা কোনো না কোনো দেশকে মেলার থিম হিসেবে প্রকাশ করে। আমাদের মেলাটি সে দিক দিয়ে বিশ্বর বড় দশটি মেরার একটি হলেও তা আন্তর্জাতিক নয়! এর পেছনে বাংলা একাডেমির ‘সংকীর্ণচিন্তা’ যতখানি দায়ী তারচে’ বেশি দায়ী প্রকাশকগিল্ড। প্রকাশকরা ‘বিদেশি’ বই মেলায় আসতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখেন। তাদের ধারণা বিদেশি বই আসতে দিলে তাদের বই বিক্রি হবে না। এই উদ্ভট ধারণা থেকেই তারা এর বিরোধিতা করেন সম্ভবত। অথচ বিদেশি বই থাকলে বরং সুস্থ্য প্রতিযোগিতায় দেশি প্রকাশনী আরও উন্নত হত। দেশের পাঠককুলকে গোপনে বৈদেশিকমুদ্রা ব্যয় করে একে ধরে তাকে ধরে বিদেশ থেকে বই আনাতে হতো না। এখানে আরও একটি অদ্ভুত ব্যাপার আছে! বিদেশি বই মেলায় নিষিদ্ধ হলেও খোলা বাজারে নিষিদ্ধ নয়। যে প্রকাশকরা মেলাতে বিদেশি বই তোলেন না, তারাই তাদের দোকানে দিব্যি সে বই বিক্রি করেন সারা বছর। আজ না হোক কাল একুশে বইমেলাকে আন্তর্জাতিক করতে হবে। তা না হলে মেলা এক সময় কূপমণ্ডক আর পশ্চাদপদদের মৌসুমী আখড়ায় পরিণত হবে। বাংলা সাহিত্য কয়েকজন হাই প্রোফাইল প্রকাশকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে। বাংলা নিয়ে বাংলার বাইরে আর কোনো আলোচনা-সমালোচনা হবে না। বাংলা সাহিত্য ঘরকুণো হয়ে নিজের বৃত্তেই ঘুরপাক খাবে। আর ঠিক এই অবস্থার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রকেও কিছু দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। রাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলা একাডেমি মেলায় অনেক পুরোনো সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করলেও নতুন কিছু সুবিধা দিয়েছে। সেগুলো অবশ্যই প্রশংসা পেতে পারে।
মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কণ, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন। একাডেমি প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ির আদলে লেখককুঞ্জ। মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অবাধ সুবিধার্থে গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকছে। মেলার উভয় অংশই ওয়াইফাই সুবিধার আওতায় থাকবে। এছাড়াও বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করেছে।
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করছে। এ ছাড়া এফ এম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করছে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হচ্ছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করছে।
গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৫ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
এত কিছু যে মেলাকে কেন্দ্র করে সেই মেলার সময়সূচি নিয়েও যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের। আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান রাতভর হতে পারে। বাণিজ্যমেলা রাত এগারটা পর্যন্ত হতে পারে। ক্রিকেট ম্যাচও রাত ১১টা ১২টা পর্যন্ত হতে পারে। তাহলে এত মানুষের সমাগমে বইমেলা কেন রাত ৮টা বাজতে না বাজতে বন্ধ হবে? সারা দিন চাকরি, ব্যবসা করে মানুষজন মেলায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়। অনেকের তো আসতেই ৮টা বেজে যায়। তারা কি মেলায় যেতে পারবেন না?
লেখক : কলামিস্ট
এইচআর/পিআর