নির্বাচন করতে পারছেন না কাদের সিদ্দিকী
টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে কাদের সিদ্দিকী এই উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ সংক্রান্ত দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে আজ (বৃহস্পতিবার) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। একইসঙ্গে আদালত রায়ে বলেছেন, টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা নেই।
এই রায়ে কাদের সিদ্দিকীর মনোয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্বান্ত বহাল রাখা হলো। একইসঙ্গে রিটের নিষ্পত্তি করা হলো।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট ড. ইয়াছিন খান সাংবাদিকদের বলেন, কাদের সিদ্দিকীর মনোয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। এতে করে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তবে কাদের সিদ্দিকীর আইনজীবী ব্যারিষ্টার রাগিব রউফ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করবো।’
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত বছরের ১০ নভেম্বর এই নির্বাচন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঋণ খেলাপের অভিযোগে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর মূলত তার করা এই রিটের কারণেই থেমে ছিল টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন।
এরআগে গত ১ ফেব্রুয়ারি এই রিটের শুনানি করে রায়ের জন্য আজকের তারিখ ধার্য করে দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের জারিকৃত রুল নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২ নভেম্বর এই বেঞ্চ ঠিক করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ।
বেফাঁস মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ সংসদীয় আসন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ওই আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গেল বছরের ১০ নভেম্বর ওই আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রীর মনোনয়নপত্র ইসি বাতিল করে দিলে প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি। এরপর গত ২৭ অক্টোবর উপনির্বাচন স্থগিত করেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এরপর গত বছরের ১০ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে কাদের সিদ্দিকী ও তার দলের আরো তিনজনসহ মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কিন্তু ঋণখেলাপের অভিযোগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবর ইসিতে আপিল করেন কাদের সিদ্দিকী। ১৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের চূড়ান্ত রায় দেন। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী।
ওই রিটের শুনানি করে গত বছরের ২১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের আদেশ স্থগিত ও কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে আদেশ দেন বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ।
পরে ২৬ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন ইসির অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মো. ইয়াসিন খান।
কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থার নামে অগ্রণী ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। কাদের সিদ্দিকী এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী পরিচালক। ওই ঋণ খেলাপি হওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল ইসি।
এফএইচ/এনএফ