আফগানিস্তানে মিলল ক্ষুদে মেসি ভক্তের খোঁজ


প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

প্রতিনিয়ত বুলেট কিংবা বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে তাদের। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই বেঁচে থাকতে হয়। মনে হয় যেন, এই বুঝি কোন আত্মঘাতি বোমায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে ছোট্ট কচি শরীরখানা। নাহ, ছোট্ট এই ক্ষুদে আফগানি- চরম অনিশ্চয়া নিয়ে ভাবে না। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মাঝেও খুঁজে ফেরে জীবনের মানে। তার এই জীবনের মানে খোঁজার সবচেয়ে বড় উপলক্ষ, ফুটবল। এই একটি খেলার প্রতি ভালাবাস আর উম্মাদনাই ছোট্ট শিশু মুরতাজা আহমদিকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দিল পুরো পৃথিবীতে। আর এর যোগসূত্র তৈরী করলো কে? লিওনেল মেসি নাম আরেক বিশ্বখ্যাত তারকা এবং ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

ছোট্র এক শিশু মুরতাজা আহমাদি। ফুটবল খেলাকে খুবই ভালবাসে। আর ফুটবল মানেই তার কাছে লিওনেল মেসি। তাই আপন খেয়ালে পরে নিয়েছিল আর্জেন্টিনার দশ নম্বর জার্সিটা। আসলে, মূল জার্সিটা তো জোটেনি তার কাছে! তাই নীল-সাদা পলিথিনের প্যাকেট কেটেই বানিয়ে নিয়েছিল জার্সি। পিঠে নীল কালিতে লেখা ১০ নাম্বার। তার এই ছবিটাই মোবাইলে তুলে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে দিয়েছিলেন মুরতাজার বড় ভাই হুমায়ুন।

ইন্টারনেটে প্রকাশ হওয়ার ছোট্ট মুরতাজার ছবি হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যাকে বলে ভাইরাল; কিন্তু সমস্যা বাধলো অন্য জায়গায়। নীল-সাদা ডোরাকাটা পলিথিন কেটে কোন এই শিশু মেসির জার্সি বানালেন! কোন দেশের, কোন পিতার সন্তান সে? তার ঠিকানাই বা কী। এমন খোঁজ চলতে থাকে বিশ্বব্যাপি। কৌতুহলী সবাই খোঁজ করতে থাকে তার ঠিকানা।
 
কারণ, এই শিশুর নাম-পরিচয়ই যে পুরোপুরি অজানা! শুরু হয় খোঁজ। নানা প্রান্ত থেকে নানা দাবি উঠতে শুরু করে। দাবি ওঠে, সে নাকি ইরাকের দোহুকের বাসিন্দা। স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল তার খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েও দিয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো যে, আসল শিশুটি সে নয়। সুতরাং, আবারও শুরু হলো খোঁজ।

শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেলো আসল মেসি ভক্তের খোঁজ। ছোট্ট শিশু মুরতাজা আহমাদির সন্ধান মিললো আফগানিস্তানে। কাবুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে গজনি প্রদেশের জাঘোরি জেলার একটি গ্রামে বসবাস মুরতাজার। ওই গ্রামেই কৃষি কাজ করেন তার বাবা। ৫ বছর বয়সী ছোট্ট মুরতাজার এখনও স্কুলে যাওয়াই শুরু হয়নি। তবে ফুটবল দেখলেই আত্মহারা হয়ে ওঠে সে। আর মেসি বলতেই যেন পাগল। আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে তার সে কি উন্মাদনা!

মুরতাজার এক চাচা আজিম আহমদি থাকেন অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকেই তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই শিশুটিই তার ভাতিজা মুরতাজা আহমাদি। মুরতাজার পিতা আরিফ আহমাদির সঙ্গে কথা বলেই তিনি নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠা ছোট্ট মেসি ভক্ত আর কেউ নয়, তাদেরই সন্তান মুরতাজা আহমাদি।

চাচা আজিম আহমাদি আরও জানিয়েছেন, বড় ফুটবলারই হতে চায় মুরতাজা। বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলে ওই জার্সি তৈরি করেছিল সে। ওই ছবিটাই ফেসবুকে পোস্ট করেছিল তার ভাই হুমায়ুন।

কিছু দিন আগেই পঞ্চমবারেরমত ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। এ নিয়ে পাঁচবার। ক্ষুদে ভক্ত মুরতাজার কথা এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে মেসির কাছে। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। যেখানে প্রতি দিনের বেঁচে থাকাটাই নিশ্চিত নয়, সেখানে ছোট্ট মুরতাজার স্বপ্ন কি সত্যিই হবে? প্রথমে মেসির ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানানো হয়েছিল, তারা কিছু করতে চান।



অবশেষে, টুইটের মাধ্যমে মেসি নিজেও জানিয়েছেন, খুদে ভক্তকে আপাতত নিজের একটি অরিজিন্যাল জার্সি উপহার দিতে চান। নিজেই মুরতাজার কয়েকটি ছুবি টুইটারে পোস্ট করেছেন মেসি। তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু জার্সিই নয়, ক্ষুদে ভক্তের ভবিষ্যত নিয়েও ভাবতে শুরু করেছে মেসি ফাউন্ডেশন। মুরতাজার জন্য আর কী করবেন মেসি? পুরো দুনিয়া অপেক্ষায়।

আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।