অথর্ব মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে রেল


প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

বছর বছর রেল ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে রেলের যাত্রী কমবে, আয় কমবে এভাবে রেলকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরণত করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার প্রস্বাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটি মনে করে মাথাভারি প্রশাসন, অনিয়ম দুর্নীতি আর লোকসানের কারণে রেল মন্ত্রণালয় অথর্ব মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে।

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ভাড়া বৃদ্ধি না করে বরং ভাড়া কমানোর দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ দাবি উত্থাপন করেছে ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটি।

সংগঠনটির দাবি, প্রধানমন্ত্রী কার্বন নিসরণের জন্য রেলকে গতিশীল, সম্প্রাসারণ ও ট্রেনে যাত্রী বাড়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু এখন যদি ভাড়া বাড়ানো হয় তাহলে যাত্রী বাড়বে না বরং কমবে। সরকার উল্টো আবারো লোকসানে পড়বে। কার্বনও নিসরণ করা হবে না।

রেলের কোচ সংখ্যা বৃদ্ধি, দক্ষ লোকবল বৃদ্ধি ও গতি বাড়িয়ে, রেলের সুপরিকল্পিত সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই রেলকে লাভজনক ও জনবান্ধব মন্ত্রণালয়ে পরিণত করা সম্ভব। তবে এজন্য সুশাসন নিশ্চিত করা ও নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সারাদেশে রেলের বিকাশে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ খুব দ্রুতই নেয়া উচিত বলেও মনে করে সংগঠনটি।

সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ২০ বছর পর ২০১২ সালে অক্টোবরে রেলখাতকে লাভজনক করা ও যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য ৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল সরকার। কিন্তু কিসের সেবার মান বৃদ্ধি উল্টো তিন বছর না যেতেই পুনরায় ভাড়া বৃদ্ধির পায়তারা করছে।

তিনি বলেন, এডিবির ঋণের টাকা নিয়ে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের নামে রেলখাতকে পাট খাত বানানোর চক্রান্ত চলছে। কিন্তু অসাদু কর্মকর্তাদের কারণে সরকার ভুল জালে আটকে রয়েছে।

এডিবির ঋণের কারণে এ বছরই শুধু ভাড়া বাড়বে না বরং প্রতি বছরই ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। এমনই শর্ত ঋণদানের জন্য আরোপ করেছে এডিবি।

আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ যেখানে এতসব বিদেশী প্রেসক্রিপশন বাদ দিয়ে নিজেদের মতো করে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করছে সেখানে বাংলাদেশ উল্টোপিঠই প্রদর্শন করে যাচ্ছে। আর সে কারণেই বিগত কয়েক বছরের রেলওয়ের কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসানেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নতি ঘটেনি রেলের।

এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, বোম্বে শহরকে ট্রেন ছাড়া চেনাই যায় না। আর ঢাকা? যানজট ছাড়া চেনাই যায় না। এর কারণ রেলের অনুন্নয়ন।

পাকিস্তান আমলে রেলে কর্মচারিদের মধ্যে বিহারীরাই বেশি ছিল। স্বাধীনতার পর আস্তে আস্তে রেল খাত মরে যেতে বসেছে। আপনি রেল খাতে বাজেটের টাকা কিভাবে খরচ করতেছেন তার হিসেব স্বচ্ছ হতে হবে। কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা নেই।

জাপানেও রেল খাতকে প্রাইভেটাইজেশন করা হয়েছে। কিন্ত ছেড়ে দেয়া হয়নি। নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ছেড়ে দেয়ে রেলের অবস্থা খারাপ ও লোকসান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে শুরু করে রেলের পরিচালনা পর্ষদে রদবদল করে দক্ষ ও কর্মঠ লোকবল নিয়োগের দাবি জানান তিনি।

ডব্লিওবিবি ট্রাস্ট এর প্রজেক্ট গবেষক আতিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ২টি ট্রেন চলতো। তখন খরচ হতো আড়াই কোটি টাকা। এখন বেসরকারি খাতে দেয়ায় তাতে খরচ সোয়া তিনকোটি। ইলেকট্রনিক বিভাগ বগি ঠিক করে না, এখনো সিএনএস কোম্পানিকে দেয় টিকিট বিক্রি, টিকিট প্রতি ৫ টাকা দিচ্ছে, পরিকল্পনা ছাড়া ডেমু ট্রেন কিনে লোকসান হচ্ছে।

বাসদের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ১৯৭৩ সালে রেল খাতে শকতারা ৯৫ টাকা খরচ করে সরকারের লাভ করতো ১০০ টাকা। ১৯৭৫ সালে তা ছিল শতকরা ৯৪ টাকা। কিন্তু এখন কি হচ্ছে। বছর বছর শুধু লোকসানের হিসেবই শুনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সেতুর পর সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু নৌ পথ ও রেল পথের উন্নতির কোনো চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় না। একটা মালগাড়ী হাজার টন মালামাল বহন করতে পারে, সড়কের যানবাহনের চাইতে ২৫ শতাংশ কম শব্দ দূষণ করে। ২শ’ কি.মি গতির অবকাঠামো করতে পারলে সরকারের খরচ আরও কমতো ৩৫ শতাংশ। কোনো সমন্বয় নেই। কিন্তু ঠিকই ভাড়া বাড়ানোর কথা বলছে। কোনোভাবে ভাড়া বাড়তে দেয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রেলের অনুন্নতি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। রেলকে বেসরকারিকরণ করে লুটপাটের একটা অংশ বানানোর পায়তারা চলছে।

জেইউ/এআরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।