মহাসচিবের দৌড়ে বিএনপির পাঁচ নেতা
টানা চার বছর যাবত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চলছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব থেকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার গুঞ্জন শোনা গেলেও এখনো ভারমুক্ত করা হয়নি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এদিকে মার্চে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে কাউন্সিলে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব করা হবে কি না তা নিয়ে আবারো গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের মধ্যম সারির এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ত্যাগী যোগ্য ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন বিএনপিতে হয় না, এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব না করায় অনেক সক্রিয় নেতাকর্মীর মন ভেঙ্গে গেছে।
দুঃসময়ে মির্জা ফখরুলের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিএনপি এখনো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে। ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাইলে মৌলিক কিছু বিষয়ে দলে দ্রুত পরিবর্তন আনতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেক শীর্ষ নেতা। নিজেদের অবস্থানে থেকে দেশ ও দেশের বাইরে লবিং ও তদবিরও শুরু করেছেন অনেকে।
সূত্র জানায়, মহাসচিবের মতো দলের শীর্ষ পদে মির্জা ফখরুলের প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নাম শোনা যাচ্ছে। দলে গ্রহণ যোগ্যতা থাকায় তার (নোমানের) অনুসারিরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রিয় নেতাকে মহাসচিব হিসেবে দেখতে।
নোমানের অনুসারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্নভাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে বিশ্বস্থ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন নোমান। দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে নোমানের মতো পরিশ্রমী ও বিনয়ী নেতা মূল্যায়িত হবেন বলেও অাশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
এদিকে ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মহাসচিব হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে দলের বাইরে এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও এই পদ পাওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম তথা জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাপটের সঙ্গেই রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কে বিএনপির মহাসচিব হলো বা কে হলো না তার সঙ্গে আমার রাজনীতির উত্থান পতনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে গত ৫ জানুয়ারি সরকারের দুই বছর পূর্তিতে নয়াপল্টন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জনসভায় মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতেই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গণতন্ত্র হত্যা দিবস উল্লেখ করে ডাকা সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্য জনসভায় গয়েশ্বরকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়ায় মহাসচিব হতে গয়েশ্বরের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এছাড়া দল বদল করা কর্নেল অলি আহমেদও বিএনপিতে ফিরছেন এমন গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিএনপিতে ফিরলে মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামকেও মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। জানা যায়, এক্ষেত্রে তরিকুল ইসলাম দায়িত্ব দেয়া হলে কয়েকটি শর্তের কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়াকে। তার হাতে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দেয়া ছাড়াও কয়েকটি কাজে একক স্বাধীনতা দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদের নামও শোনা যাচ্ছে মহাসচিব হিসেবে। দলের সংকটকালীন সময়ে তার কর্মকাণ্ডে খুশি খালেদা জিয়া। তাই তুলনামুলক তরুণদের থেকে কমিটি করা হলে রিজভীকেও মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে ধারণা করছেন অনেকে।
নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে বড় একটি সিন্ডিকেট করেছেন রিজভী। সিন্ডিকেটের সব সদস্যরাই তাকে মহাসচিব করার জন্য নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন।
অপর এক সূত্রে জানা যায়, সর্বোপরি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখনো পূর্ণ মহাসচিব করা না হলেও তাকে আরো কিছুদিন দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী এ নেতাকে পূর্ণ মহাসচিব না করলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে -এমন আশংকা থেকেই এ চিন্তা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, কাউন্সিলে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। দলকে শক্তিশালী করতে হলে কাউন্সিলের বিকল্প নেই।
সাবেক সেনা প্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে জে (অব) মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। যিনি মহাসচিব পদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন সব দিক বিবেচনা করে দলীয় প্রধান সিদ্ধান্ত নেবেন।
এমএম/আরএস/এআরএস/পিআর