হিজাবের কারণে কর্ণাটকে আরও ২৩ ছাত্রী বহিষ্কার
কর্ণাটকে শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার দাবি জানানোয় শাস্তি পেলেন আরও ২৩ ছাত্রী। তারা সবাই উপ্পিনগাদি সরকারি ফার্স্ট গ্রেড কলেজের শিক্ষার্থী। গত সপ্তাহে শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার অনুমতির দাবিতে বিক্ষোভ করায় এসব ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
পুত্তুর বিজেপি বিধায়ক এবং কলেজ উন্নয়ন কমিটির (সিডিসি) চেয়ারম্যান সঞ্জীব মাতান্দুর মঙ্গলবার (৭ জুন) বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করায় গত সোমবার তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে দক্ষিণ কন্নড় জেলার পুত্তুর শহরের কলেজটিতে বেশ কিছু ছাত্রী বিক্ষোভ করেন। শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার অনুমতি দাবি করেছে তারা। এ বিষয়ে সোমবার সিডিসির বৈঠকে বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বলা হচ্ছে, কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা সত্ত্বে ওই ছাত্রীরা এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এ জন্য তাদের সাজা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
হিজাবের পক্ষে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন কর্ণাটকের মুসলিম শিক্ষার্থীরা। এরপরও গত ১৫ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে রায় দেয় কর্ণাটক হাইকোর্ট। রায়ে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি বলেছিলেন, ইসলাম ধর্মে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক নয়। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি পরা নিষিদ্ধ করার অধিকার রয়েছে স্থানীয় সরকারের।
এর আগে, গত ১ জানুয়ারি কর্ণাটকের উদুপিতে একটি কলেজে কয়েকজন হিজাব পরা শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভাট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরা শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না।
রাজ্যজুড়ে সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েক জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয়। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ।
গত ২৬ জানুয়ারি কর্ণাটক সরকার এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। ঘোষণা করা হয়, কমিটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করার আগ পর্যন্ত ছাত্রীরা কেবল ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয় কিছুই পরার অনুমতি নেই।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েকজন ছাত্রী কর্ণাটক হাইকোর্টে রিট করেন। তারা আদালতে দাবি করেন, হিজাব পরা তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনোভাবেই তা বাতিল করা যাবে না।
তবে ১০ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রিতুরাজ অবস্তি, বিচারপতি কেএস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জেএম খাজি অন্তর্বর্তী রায়ে বলেন, যতদিন না রায় ঘোষণা হচ্ছে, কর্ণাটকে স্কুল-কলেজ খুলতে পারে। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী ধর্মীয় প্রতীকসম্বলিত কোনো পোশাক পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না।
এই মামলায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্ণাটক সরকার বলে এসেছে, হিজাব পরা ইসলামের বাধ্যতামূলক অনুশীলনের মধ্যে পড়ে না। ১৫ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তাই বলা হয়েছে। এরপরও শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরা বা এর দাবি জানানোর জেরে রাজ্যটিতে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু ছাত্রীকে শাস্তি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কেএএ/এএসএম