পথের শেষ কোথায়?
পথের শেষ কোথায়, কী আছে শেষে-এই অনন্ত জিজ্ঞাসা মানুষের। বিশেষ করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আসলে মহাবিশ্বের তুলনায় সৌরজগৎ কিছুই না, একেবারে বালিকণার মতো। আর সে তুলনায় পৃথিবী তো আরো অনেক ছোট। এই মহাবিশ্বের অনেক কিছুই এখনও অজানা। অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে বহুকিছু। অধরা রয়ে গেছে মহাবিশ্বের অনেক রহস্যও। আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় অচেনা রয়ে গেছে অনেক বিস্ময়কর জগৎ। কিন্তু মহাকাশ বিজ্ঞানীরা থেমে নেই। নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে তারা রহস্যভেদ করতে চাইছেন অজানা মহাবিশ্বের।
সৃষ্টির অপার রহস্য সম্পর্কে কতটা জানি আমরা? পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর কিংবা আশি নব্বই বছর বয়সী একজন মানুষের ক্ষুদ্র এই জীবনে কতটুকুইবা জানা সম্ভব, আবিষ্কার সম্ভব? পৃথিবী থেকে যে কোনো গ্রহে যেতে যেখানে হাজার হাজার বছর প্রয়োজন, সেখানে অন্য গ্রহে পৌঁছানোই তো অসম্ভব।
মহাবিশ্বে কত কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা তো কেবল চাঁদে পা দিয়েছি, মঙ্গলে যান প্রেরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু এর বাইরের জগতের প্রায় সবই আমাদের অজানা। অজানা সেই জগতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক নয় পৃথিবী ছাড়া বসবাসযোগ্য কোনো গ্রহের অস্তিত্বও। বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এসব নিয়ে।
সেই অচীন গ্রহেও হয়তো কোনো প্রাণীর বসবাস। সেই বাসিন্দাদের আমরা এলিয়েন বলি। এলিয়েন বলতে এমন জীবকে বোঝায় যাদের উদ্ভব পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও। আর সেখানেই এদের বসবাস। এলিয়েন দেখতে কেমন তার কোনো ঠিক নেই। তারা দেখতে পৃথিবীর প্রাণিদের কাছাকাছিও হতে পারে, আবার এ ধারণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদাও হতে পারে। আবার সত্যি সত্যি মহাবিশ্বে এলিয়েনের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা এ নিয়েও দ্বিধার অন্ত নেই। তবে এলিয়েন আসলেই রয়েছে- পৃথিবীতে এমন বিশ্বাসীদের সংখ্যাই বেশি। এলিয়েনরা দেখতে কেমন? আমাদের চেয়ে পিছিয়ে নাকি অনেক এগিয়ে? তাদের ভাষা কি? কত সব চিন্তাভাবনা মানুষেন মস্তিষ্কে? অামরা যেমন ভাবছি তাদের নিয়ে অন্য গ্রহের এলিয়েনরা কি আমাদের নিয়ে এমন ভাবে? পিকে ছবির আমির খান হয়ে হঠাৎ কি তারা আমাদের মাঝে চলে আসবে? নাকি সবই কল্পনাপ্রসূত গল্প?
কিছুদিন আগে নাসার গবেষকদের এক দাবিতে এলিয়েনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন এক ধারণা পাওয়া গেছে। নাসার গবেষকরা নাকি শনির সবচেয়ে বড় চাঁদ টাইটানে এলিয়েন বা মহাজাগতিক প্রাণি থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। নাসার ক্যাসিনি থেকে পাঠানো ডাটা বিশ্লেষণ করেই গবেষকরা টাইটানে এ সূত্র খুঁজে পেয়েছে। গবেষকদের টেলিগ্রাফ অনলাইনে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শনির অনেকগুলো চাঁদের মধ্যে একমাত্র টাইটানের আবহাওয়াই প্রাণ ধারণের উপযোগী। আর চাঁদের এই আবহাওয়ায় জীবনের উৎপত্তি হয়েছে এবং তারা শ্বাস নিতে পারছে। আরো জানা গেছে, ঐ ভূপৃষ্ঠের জ্বালানি খেয়েই নাকি বেঁচে আছে টাইটানের এসব এলিয়েন!
মানুষ যেভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিতে অক্সিজেন ব্যবহার করে তেমনি টাইটানের এলিয়েনরা হাইড্রোজেনে শ্বাস নিয়ে টিকে আছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, আগামী ৪০০ কোটি বছর পরে সূর্য যখন লাল বামন দৈত্যের আকার ধারণ করবে, তখন টাইটানে বাস করাটাই হবে উপযুক্ত। কারণ তখন এটিই হবে স্বর্গতুল্য।
বিতর্ক থাকলেও যেহেতু এলিয়েন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আর কৌতূহলের শেষ নেই, তাই ধরে নেওয়া যায় সত্যিই হয়তো ভিনগ্রহের কিছু একটা আছে। যদি থেকেই থাকে তাহলে ওদের আকৃতি কেমন? পিকে-র আমির খানের মত? নাকি বিভিন্ন ছবির কাল্পনিক আকৃতির এলিয়েনের মত?
বলা হয়ে থাকে, ‘যাকে দেখিনি সে বড় সুন্দরী, আর যা খাইনি তা বড় সুস্বাদু।’ তেমনই এই প্রাণিদের বিজ্ঞানীরা অনেক বুদ্ধিমান বলছে! এই বুদ্ধিমান প্রাণিরা দেখতে ঠিক কী রকম হবে তা নিখুঁতভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এদের চেহারায় কী কী থাকতে পারে, তা অন্তত বলা যায়। কারণ, বিজ্ঞানের প্রাথমিক নিয়মগুলোকে কোনো ক্ষেত্রেই উতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্বজগতের সব জায়গাতেই বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক নিয়ম মোটামুটি একই রকম।
তাই বলা যায়, খাঁড়া কানের আমির খানের মতই হবে এলিয়েন, নয়তো সিনেমায় যেমন দেখি, এলিয়েন দেখতে সে রকমই হবে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মহাকাশ গবেষক।
এইচআর/এমএস