রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: যেসব প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ২৮ মে ২০২২

ইউক্রেনের কৃষকদের হাতে বর্তমানে দুই কোটি টন শস্য রয়েছে যেগুলো যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে আসতে পারছে না। অন্যদিকে দেশটিতে নতুন ফসল কাটার সময়ও চলে এসেছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ইউক্রেন যেসব শস্য বড় আকারে রপ্তানি করে তার মধ্যে রয়েছে সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা, গম এবং বার্লি।
অন্যদিকে একই শস্য বিশ্ববাজারে বড় আকারে সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। অন্যান্য দেশের মতো এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর মানুষ এখন দিশেহারা। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের যেসব ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে সেগুলো হলো-

গম আমদানিতে প্রভাব
বাংলাদেশের মানুষ ক্যালরির জন্য ভাতের ওপর নির্ভরশীল। তবে আটা-ময়দার ওপরও ধীরে ধীরে নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর এই আটা-ময়দা আসে গম থেকেই। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে গমের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বাংলাদেশ তার চাহিদার ৮০ শতাংশ গম আমদানি করে। এর অর্ধেক আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে গমের দাম বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশে আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। সেই সঙ্গে আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি খাদ্যর দামও কিছুটা বেড়ে গেছে।

ভোজ্যতেল
বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম এখন লাগামছাড়া। যদিও বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বেশিরভাগই আসে পাম এবং সয়াবিন থেকে। বিশ্বজুড়ে যেসব ভোজ্যতেল ব্যবহার হয় তার মধ্যে সূর্যমুখী তেল প্রায় ১৩ শতাংশ। এর প্রায় ৭৫ শতাংশই আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে।

যেহেতু এই সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে সেজন্য বিশ্বজুড়ে ভেজিটেবল অয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউট-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয় ভেজিটেবল অয়েল আমদানি করে হয় কাঁচামাল হিসেবে, নয়তো প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে ( পাম তেল এবং সয়াবিন তেল)। তেলবীজ আমদানি করে সেটা স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি করে। কিন্তু একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি-পরবর্তী শ্রমিক সংকটের কারণে দাম কিছুটা উর্ধ্বমুখী ছিল। পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধ দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

হাঁস-মুরগি ও গরুর খাবার
পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভুট্টা। বিশ্ববাজারে ইউক্রেন ১৬ শতাংশ ভুট্টা সরবরাহ করে। পৃথিবীর আরও অনেক দেশে ভুট্টা উৎপাদিত হয়। যেহেতু ইউক্রেন থেকে ভুট্টা সরবরাহ আসতে পারছে না সেজন্য বিশ্বজুড়ে পোল্ট্রি ফিড-এর দাম বেড়েছে। এর ফলে বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে।

পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের ৬০ শতাংশ উপকরণ আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উপকরণ হচ্ছে ভুট্টা। কিন্তু ভুট্টার দাম অনেক বেড়ে গেছে। পোল্ট্রি ফিডের মূল উপাদানের মধ্যে ভুট্টা এবং সয়াবিন মিল (সয়াবিনের ভুষি) এ দুটো হচ্ছে মূল উপাদান।

সার আমদানিতে খরচ
বিশ্ববাজারে সিংহভাগ সার রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং বেলারুশের ভূমিকা রয়েছে। রাশিয়ার ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে তা বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে সার আমদানি করে। সেটা ব্যাহত হলে ভিন্ন কোন উৎস দেখতে হবে। এতে করে খরচ বাড়বে কৃষি খাতে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় মেটাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসছে বাজেটে জ্বালানি তেলের ভর্তুকির জন্য সরকারকে অনেক টাকা গুণতে হবে। অন্যথায় তেলের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু তেলের দাম বাড়লে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।