ধ্বংসযজ্ঞের দ্বিতীয় রাত দেখলো শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় মঙ্গলবার রাতেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী কলম্বোর কাছের একটি শহর নেগোম্বোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বহু ঘরবাড়িসহ সরকারি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে দেশটিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল রিসোর্টেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার মানুষের এমন বিক্ষোভ এর আগে কখনো দেখেনি কেউ।
দেশটির অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে পড়ার কারণে সোমবার (৯ মে) বিক্ষোভে জড়ো হন লাখো জনতা। সেখানে সরকার সমর্থকরা আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। শুরু হয় দাঙ্গা। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে চলা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিশেষে ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে চলে যায়। মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যায় বিক্ষুব্ধরা। আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের জমানো ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার সব শ্রেণিপেশার মানুষ। দুই দিনের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে আটজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও দুইশ জনের মতো।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট, খাদ্য সংকট, প্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামসহ নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকা পড়েছে দেশটির সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। চলতি সপ্তাহে দেশজুড়ে ঘটতে থাকে সহিংস ঘটনা। অগত্যা সরকার কারফিউ জারি করে রাজধানী কলম্বোসহ সর্বত্র।
সোমবার রাতে বিক্ষুদ্ধ জনতা দেশটির রাজনীতিবিদদের ৫০টির বেশি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানা গেছে। রাজাপাকসের পরিবারকে উৎসর্গ করা একটি বিতর্কিত জাদুঘরও ধ্বংস করে দেয় তারা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকায় তৃতীয় দিনের মতো বুধবারেও দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে দেশটিতে। কলম্বোর রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বহু সদস্যকে। সহিংসতাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে রাজাপাকসে সরকার। তা সত্ত্বেও, বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলম্বোর প্রধান প্রতিবাদস্থল গ্যালে ফেস গ্রিন-এ জড়ো হতে থাকেন। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে অর্থনীতিকে বানচাল করেছেন এবং তাকে অবশ্যই সরে দাঁড়াতে হবে।
অপরদিকে, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অনলাইনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া যতদিন প্রেসিডেন্ট আছেন তারা অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেবে না। সেকারণে এখনো বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না সরকার গঠনে কোন দল এগিয়ে আসছে।
সূত্র: বিবিসি
এসএনআর/জেআইএম