মাল্টা চাষে ভাগ্য বদল


প্রকাশিত: ০৪:২০ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

সাগর উপকূলের জেলা পিরোজপুর। মাটি আবহাওয়া আর পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এখানকার কৃষকরা চাষাবাদে যেমন এনেছেন বৈচিত্র, তেমনি এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞান উদ্ভাবনীতে। এক সময় উপকূলকে এক ফসলী জমির অঞ্চল বলা হলেও সেই অপবাদ এখন অনেকটাই ভ্রম বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন পিরোজপুরের কৃষাণ-কৃষাণীরা।

সরেজমিনে দূর্গাপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামের মাল্টা বাগান করে স্বাবলম্বী রেবতী সিকদার (৩৮) জানান তার অভিজ্ঞতার কথা। এইচএসসি পড়াকালীন বাবাকে হারান তিনি। সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন বাবা খগেন্দ্রনাথ সিকদার। ফলে সংসারের বোঝা বইতে লেখাপড়া বন্ধ করে বাবার নেশার মতো তিনিও ছবি আঁকায় মনোনিবেশ করেন। সাইনবোর্ড, ব্যানার ও  দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন অংকনে তিনি পারদর্শী। এ দিয়ে যা আয়-রোজগার হতো তা দিয়েই চলছিল তার সংসার। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী পলি রানী সিকদার, দু’কন্যা তুলি ও মিলিকে নিয়ে সংসার রেবতীর।

অবশেষে দূর্গাপুরের বিভিন্ন গ্রামে মাল্টার বাগান সৃজনের কথা শুনে শখ হলো তিনিও বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলবেন মাল্টার স্বপ্নের বাগান। বাগানের নেশা এমনভাবে তাকে আকৃষ্ট করলো যে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে মাত্র ১০ শতক নিচু ধানি জমিতে বেড় কেটে মাটি দিয়ে উঁচু করে সৃজন করেন মাল্টা বাগান। জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলা থেকে বারী-১ ও ইন্ডিয়ান জাতের ৫০টি গাছ ক্রয় করেন যার প্রতিটি চারার মূল্য ছিল ১৬৫ টাকা করে।

Malta

২০১৪ সালে বিশ হাজার টাকার মাল্টার সঙ্গে মাল্টা বাগানের সাথী ফসল বিক্রি করে অর্ধ লাখ টাকা আয় হলেও এ বছর তার আয়ের পরিমাণ ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া মাল্টা বাগানের সাথী ফসল হিসেবে রেবতী চাষ করেছেন লাউ, চাল কুমড়া, পেঁপে, পালন শাক, লাল শাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যা থেকে আরও অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয়ের আশা করছে রেবতি।

রেবতী জানান, ১০ শতক জমিতে ধান থেকে যেখানে আয় হতো বছরে হাজার দুয়েক টাকা সেখানে সব মিলিয়ে হাজার বিশেক টাকা খরচ করার পর তার উপার্জন হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

মাল্টা চাষী রেবতী আরও জানান, তার বাগানে রয়েছে আরও প্রায় ৪শ’ মাল্টার নার্সারি, প্রতিটি চারা বিক্রয় করেন ১৫০ টাকা দরে। তিনি ভবিষ্যতে বানিজ্যিকভাবে নার্সারি শিল্প গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথা জানালেন। এ বছর তার বাগানে উৎপাদিত মাল্টার আকার, বাহারী রং আর স্বাদ যেকোন ফল প্রেমিকের চোখকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। গত বছর গাছে ফল আসার পর চলতি বছর তিনি কয়েকটি ধাপে মাল্টা বিক্রয় করেছেন প্রায় ৯০ হাজার টাকার। তার গাছে আরও মাল্টা রয়েছে যার বিক্রয় মূল্য হতে পারে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

তার মতে, মাল্টা চাষে তেমন কোনো বিনিয়োগ করতে হয় না। প্রথম বছরে বিনিয়োগ সামান্য একটু বেশি হলেও পরবর্তীতে তেমন কোনো খরচ নেই বলে জানান রেবতী। কৃষি বিভাগও রেবতীর মাল্টা বাগান দেখে মুগ্ধ ও অভিভূত।   

Malta

রেবতির মাল্টা বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় মুহূর্তেই। সবুজ পাতার মাল্টা গাছে হলুদ রংয়ের শত শত মাল্টার দোল দেখে চোখ ফেরানো দায়। রেবতীর বাগানের মাল্টার আকার ও স্বাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। তাই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দূর দূরান্ত থেকেও ছুটে আসে রেবতীর মাল্টা বাগানে। মাল্টা চাষে আগ্রহী বেকার যুবকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয় রেবতী। রেবতীর ইচ্ছে মাল্টা বাগান করে তার মতো স্বাবলম্বী হোক এলাকার উৎসাহী যুবকেরা।

পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন তালুকদার বলেন, রেবতীর মাল্টা আকারে বড় এবং খুবই সুস্বাদু। এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষে খুবই উপযোগী বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। এ জেলার পিরোজপুর সদর, কাউখালী, মঠবাড়িয়া এবং নাজিরপুরে গত ৫ বছরে ৬৫টি মাল্টা বাগান করা হয়েছে। এসব বাগানে ১০ সহস্রাধিক চারা রোপণ করা হয়েছে। মাল্টা চাষে এ এলাকার মানুষজনের মধ্যে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তা আগামীতে মাল্টা চাষে বিপ্লব সৃষ্টি করবে। এ অর্থকরী ফসলটি চাষে কৃষি বিভাগ উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করছে। যা কৃষকদের কাছে অভাবনীয় একটি সাফল্য।

হাসান মামুন/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।