না.গঞ্জে পাঁচ খুন : কিছুতেই থামছে না স্বজনদের কান্না
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের রেশ না কাটতেই শহরের একটি ফ্ল্যাটে দুই শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। দুই শিশু এবং নারীসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা শীতলক্ষ্যা পাড়ের এই জনপদে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বলে আদৌ কিছু আছে কিনা সে প্রশ্নটি নতুনভাবে উঠে এসেছে। হত্যাকাণ্ডটি যে পরিকল্পিত, তা অনেকটা নিশ্চিতভাবে বল যায়। পরিকল্পিত ছাড়া শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যা করা অসম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন।
পাঁচ খুনের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন দুটি দিক নিয়ে রহস্যের উন্মোচনের চেষ্টা চালালেও এখনো কোনো ক্লু বের করতে পারেনি। বিশেষ করে নিহত লামিয়াকে কু-প্রস্তাব দেয়া নিয়ে ভাগিনা মাহফুজের বিরোধের ঘটনার জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা করলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্ত মাহফুজের মুখ থেকে এখনো কিছু বের করতে পারেনি। তবে মাহফুজ গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ কিছু তথ্য দিলেও এখন তা পিছু হটে।
নিহতের পরিবার স্পষ্ট ভাষায় বলছেন এবং মামলায়ও উল্লেখ করেছেন, মাহফুজ লামিয়াকে কু-প্রস্তাব দেয়ায় মাহফুজকে জুতা পেটা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাঁচজনকে খুন করে থাকতে পারে। আর ঢাকার কলাবাগানের নাজমা আর শাহজাহান ১২ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি করে নানাভাবে হুমকি দেয়ায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তীর তাদের উপরও রয়েছে। এ দুটি ঘটনা নিয়ে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের কাজে একটিতে অগ্রসর হলেও অপরটিতে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের পাঁচ খুনের ঘটনায় নিহতের স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মা, মেয়ে ও ছেলের এ নির্মম হত্যাকাণ্ড যেন কেউ মেনে নিতে পারছে না। নিহতের স্বজনদের কান্নায় সেখানে উপস্থিত লোকজনও আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠে। অনেকেই কান্না করতে দেখা যায়। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এখনও থামছে না স্বজনদের চোখে অশ্রুর বন্যা।
এছাড়া নাতী শান্ত ও নাতনী সুমাইয়াসহ দুুই পুত্রবধূকে হারিয়ে দিশেহারা শ্বাশুড়ি আমেনা বেগমের কান্না কোনাভাবে থামছে না। এছাড়াও নিহত মোরশেদুলও তারই আপনজন। নিহত পাঁচজনের লাশ দেখতে আসা সাধারণ জনগণ আমেনা বেগমকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করেও তারপর কোনোভাবেই কান্না থামে না।
এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার নাতিটা কোরআন শিখতো, হাফিজিয়া পড়তে শুরু করছে। খুব ভালোভাবেই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতো। খুব ভালো পোলা আছিলো। হেগো তো মারে নাই আমারে মাইরা রাইখা গেছে। কেন আমার এতবড় সর্বনাশ করলো’। আমরা সুখের সংসারটা নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমার সংসারটা তছনছ করে দিছে। আমরা যে কেউ থাকলো না’।
এদিকে শহরের বাবুরাইলে যেই ফ্লাটে হত্যাকাণ্ড ঘটে ওই বাড়িসহ তার আশেপাশের এলাকাবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে যায় বসবাসকারীরা। বিশেষ করে এলাকার যুবসমাজ আগে সন্ধ্যার পর যেধরনের জমজমাট ছিল এখন সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। সবার মাঝে আতঙ্ক।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং বাবুরাইল খানকা মোড় এলাকার একটি ফ্লাট বাড়িতে একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ছোটভাই মোরশেদুল (২২) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)।
তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরভেলাবাড়ি। তারা শহরের বাবুরাইল ২নং এলাকার খানকামোড় এলাকার আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইলের বাসায় ভাড়া থাকতেন।
শাহাদাত হোসেন/বিএ