শ্রীলঙ্কার টেক্সটাইল ব্যবসা বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা
শ্রীলঙ্কায় চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দেশটির টেক্সটাইল ব্যবসা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে আসছে। ভারত এরই মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত তুলা আমদানির সুবিধা পাওয়ায় শ্রীলঙ্কা থেকে বেরিয়ে যাওয়া কার্যাদেশ এ দেশেই বেশি আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউপি সিং বার্তা সংস্থা এএনআই’কে বলেছেন, কিছু দেশ যারা আগে শ্রীলঙ্কা থেকে (টেক্সটাইল পণ্য) আমদানি করতো, তারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। কারণ শ্রীলঙ্কা তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কার্যাদেশ পেয়েছে। তিরুপুর হলো ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের বস্ত্রশিল্পের প্রাণকেন্দ্র।
ইউপি সিং জানান, গত বছর ভারতের টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে এ বছর ১০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটি। তিনি বলেন, ভারত বর্তমানে ৩৪০ লাখ বেলের বেশি তুলা উৎপাদন করে (প্রতি বেলে ১৭০ কেজি)। তবে শ্রীলঙ্কার কার্যাদেশ চলে আসায় এ বছর এর ব্যবহার উৎপাদনের চেয়েও বেশি হতে চলেছে।
সাক্ষাৎকারে ভারতের টেক্সটাইল সচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তুলা আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু ভারতীয় আমদানিকারকদের ১১ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। এর ফলে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের তুলনায় প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়ে ভারত।
গত ১৩ এপ্রিল তুলা আমদানিতে সাময়িকভাবে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তুলা আমদানি করতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আর কোনো শুল্ক দিতে হবে না।
ভারতীয় আমদানিকারকরা দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের কাছে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন জানিয়ে ইউপি সিং বলেন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মতো নির্দিষ্ট বাজারে বিশেষ সুবিধা পায়, সেখানে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পিছিয়ে ছিলেন।
ভারতের টেক্সটাইল সচিব বলেন, আমাদের রপ্তানিকারকদের ৯ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক দিতে হয়, যা ওদের (বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম) দিতে হয় না। এখন তুলার ওপর এই ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৯ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক যোগ করলে ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানিকারকদের জন্য ওই দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন যেহেতু আমাদের আর তুলা আমদানিতে শুল্ক দিতে হচ্ছে না, এটি অবশ্যই ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টার্স অর্গানাইজেশনের সভাপতি এ শক্তিভেল বলেন, ক্রেতারা এখন তিরুপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় খোঁজখবর শুরু করেছে, কারণ শ্রীলঙ্কার অবস্থা খারাপ। কিছু খোঁজখবর কার্যাদেশে পরিণত হতে পারে। ভালো আলোচনা হচ্ছে। এটি দারুণ সুযোগ। আমরা আশা করছি, শ্রীলঙ্কা থেকে সরে যাওয়া বেশ কিছু কার্যাদেশ ভারত পাবে।
তিনি বলেন, ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা মূলত উভেন আইটেম, শার্ট, টি-শার্ট ও শিশুদের কিছু পোশাকের ব্যাপারে খবর নিচ্ছে। আমরা আশাবাদী, এ থেকে কিছু কার্যাদেশ পাওয়া যাবে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধেরও অবস্থা নেই তাদের।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না শ্রীলঙ্কা, ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। গত দুই বছরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এরই মধ্যে নিজেদের ঋণখেলাপি ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। চরম অর্থসংকটের মুখে ক্ষুব্ধ জনগণ লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করছে। এক মাসের বেশি হলো বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। এ অবস্থায় টেক্সটাইল ব্যবসা হাতছাড়া হলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আরও অন্ধকার নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোমনিক টাইমস
কেএএ/এমএস