বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় নববর্ষ উদযাপন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১০ এএম, ১৫ এপ্রিল ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

কাঠের টুকরো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাতে ছোট্ট একটি পাত্রে দুধ গরম করে নববর্ষ পালনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে বহু মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশে নতুন বছরের শুভ সূচনা করেন দিলানি জয়ারত্নে। দ্বীপ রাষ্ট্রটির সিংহল এবং তামিল জনগোষ্ঠী সাধারণত নিজ নিজ বাড়িতেই প্রাচীন রীতি মেনে নববর্ষ উদযাপন করে আসছে। কিন্তু এবারের আয়োজন ছিল ব্যতিক্রম।

দেশটিতে অর্থনৈতিক ধস নামায় বহু মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এ বছর দিলানি ও তার পরিবারের সদস্যরা শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় হাজির হয়েছেন। নববর্ষের দিন তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।

দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানির তীব্র সংকট, খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া ও হাসপাতালে ওষুধ সংকটসহ নানাবিধ কারণে শ্রীলঙ্কাজুড়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি, দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হবে।

৩৮ বছর বয়সী জয়ারত্নে বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের আগে স্বামী ও তার দুই সন্তানকে নিয়ে রওনা হন আন্দোলনে যোগ দিতে। এক ঘণ্টার বেশি সময় ভ্রমণ শেষে কলম্বোয় রাজাপাকসের কার্যালয়ের কাছে যেটি গোতাবায়ার গ্রাম নামে পরিচিত সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশস্থলে পৌঁছান তারা। তিনি বলেন, আমরা বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। এই আন্দোলন রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে বলেও মনে করেন তিনি।

jagonews24

তার মতো আরও অনেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সমাবেশস্থলে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবীরা কাগজের প্লেটে চারকোণা আকারের ক্ষিরিভাত (নারকেলের দুধ ও চাল দিয়ে তৈরি করা), কলা, আচার ও বাটার কেক বিক্ষোভকারীদের হাতে তুলে দেন। নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি বিক্ষোভের সমর্থনকারীরা সরবরাহ করেন। আন্দোলনে সমর্থনকারী একজন বলেন, আমরা সাধারণত নতুন বছরের জন্য শুভ কামনা জানাই। এবার আমরা আন্দোলনের জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছি।

এদিকে, দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, সম্প্রতি কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটি ঠেকানো দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে ও আরও ভাল বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেই সংকট মোকাবিলা করা।

শত শত বিক্ষোভকারী রাজাপাকসের কার্যালয়ের কাছে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের কারো হাতে শ্রীলঙ্কার পতাকা। কেউবা দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসা রাজাপাকসে পরিবারের শাসনের অবসান চাইছেন।

দুই ছেলেকে নিয়ে বিক্ষোভস্থলে আসা জয়ারত্নে খুব সতর্কভাবে ছোট্ট পাত্রটিতে দুধ জ্বাল করছিলেন, যেন তা উপচে পড়ে না যায়। তিনি জানান, দুই ছেলেকে বিক্ষোভস্থলে নিয়ে আসার কারণ হচ্ছে, তারা যেন নিজের চোখে দেখতে পায় এই বিক্ষোভ কীভাবে জাতি, শ্রেণি ও ধর্মীয় বিভেদ ভুলে শ্রীলঙ্কার সব মানুষকে একত্র করেছে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।