যে সংকট নাড়িয়ে দিলো পাকিস্তানকে
পাকিস্তানের ইতিহাসে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে গত সাত দিনে। নানা নাটকীয়তার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানকে। দেশটির প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারিয়েছেন।
সাংবিধানিক সংকট তৈরি হওয়ায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইমরান খানের শাসনের পরিবর্তন হয়। যদিও এতে কয়েকদিন সময় লেগেছে। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জিতেছে সংবিধান, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র। এসবই বিপন্ন হওয়ার পথে ছিল ইমরান খানের পদক্ষেপের মাধ্যমে। কারণ তিনি অনাস্থা ভোটকে স্পিকারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর ঘোষণা করা হয় নতুন নির্বাচনের।
তবে ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে আদালত ডেপুটি স্পিকারের রায়কে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেন। পাশাপাশি অনাস্থা ভোটোর আয়োজন করতে বলেন। এর আগে ৩ এপ্রিল ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব বিদেশি ষড়যন্ত্র বলে খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। তাছাড়া ইমরানের অন্য সব পদক্ষেপও বাতিল করে সংসদ পুনর্বহাল করে আদালত।
সব প্রক্রিয়া শেষে ৯ এপ্রিল দেশটির সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট শুরু করাই ছিল সংসদের মূল আলোচ্যসূচি। কিন্তু এদিনও ভোটাভুটি নিয়ে শুরু হয় নাটকীয়তা। একের পর এক মুলতবি করা হয় সংসদের অধিবেশন। এক পর্যায়ে স্পিকার আসাদ কায়সার পদত্যাগ করেন। এরপর মধ্যরাতে ভোট হলে ইমরান খানের বিদায় ঘণ্টা বাজে। শুরু হয় নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পালা।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের বিদায়ের পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। কয়েক দিনের চলমান রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট দেশটিকে ঝাকুনি দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সর্বোচ্চ আদালত, সংসদ, প্রেসিডেন্সি, পাঞ্জাবের বিধানসভা এবং নির্বাচন কমিশন।
দেশটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে ইমরান খান এঁকে দিয়েছেন নতুন কলঙ্ক। আর তা হলো- অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো।
এদিকে ইমরান খান অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোট হতে যাচ্ছে সোমবার (১১ এপ্রিল)।
দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল আগামী ২০২৩ সালের আগস্টে। কিন্তু তার আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হলো প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন হলো মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন লিয়াকত আলি খান। কিন্তু তিনি তার পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান।
এখান থেকেই শুরু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল শেষ না হওয়ার ইতিহাস। দেশটিতে গত ৭৫ বছরে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। সেই ধারা এবারও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। সবশেষ ২০২২ সালে এসে সেই তালিকায় নাম লেখালেন ইমরান খান।
সূত্র: ডনের মতামতের আলোকে
এমএসএম/টিটিএন/এএসএম