৭৫ বছরে ইমরানই প্রথম ক্ষমতাচ্যুত অনাস্থা ভোটে
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। এদিন স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন লিয়াকত আলি খান। কিন্তু তিনি তার প্রধানমন্ত্রিত্বের পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান।
এখান থেকেই শুরু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের ইতিহাস। কারণ দেশটিতে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। সেই ধারা এবারও অক্ষুণ্ণ। সবশেষ ২০২২ সালে এসে সেই তালিকায় নাম লেখালেন ইমরান খান। তবে তিনি দেশটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে এঁকে দিলেন নতুন কলঙ্ক। আর তা হলো- অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো।
কারণ, এর আগে পাকিস্তানের ২১ প্রধানমন্ত্রীর কেউই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হননি। যদিও তাদের কারো প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ছিল ১৩ দিন তো কারো ৫৭ দিন। অনেকে আবার শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট বা সেনাপ্রধানের রোষের মুখে পড়েও গদি খুইয়েছেন। এদের কেউই পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইমরান খান
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন এক সময় ২২ গজের ক্রিকেট পিচ দাঁপিয়ে বেড়ানো এই খেলোয়াড়। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী।
এদিন রাত ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তানের সংসদ অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। এতে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি। প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট। ভোটাভুটি শেষে প্যানেল স্পিকার পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) নেতা আয়াজ সাদিক এ ফল ঘোষণা করেন। অনাস্থা ভোটে না হারলে ইমরান খান ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারতেন।
উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ের পর, ১৯৯৬ সালে রাজনীতির ময়দানে আসেন ইমরান খান। দুর্নীতি বিরোধী স্লোগানে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। এরপর ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০তম নির্বাচনে তার দল বেশ কয়েকটি আসন জেতে। আর ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট দেশটির ১৫তম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান খান।
পরিবারের সঙ্গে ইমরান খান
সবশেষ পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের দ্বারস্থ হন।
শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন। আর অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট করার নির্দেশ দেন।
জেডএইচ/এমএস