৫ সদস্যের পরিবারের হাল ধরেছে ৯ বছরের শিশু


প্রকাশিত: ১১:২৮ এএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

সাত বছর আগে গরু আনতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল বাবার। এরপর কিস্তির টাকা পরিশোধের চাপে একই কাজ করতে গিয়ে সম্প্রতি বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে ভারতে ৫ বছরের কারাভোগ করছে পরিবারের বড় ছেলে আশরাফুল।

এদিকে একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটি জেলে থাকার কারণে অসহায় হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে বাবা ও ভাইয়ের দেখানো সেই পথে এবার পা বাড়িয়েছে ওই পরিবারেরই ৯ বছর বয়সী শিশু আল আমিন। ৫ সদস্যের সংসারে এখন একমাত্র উপার্জনকারী এই শিশুটি। আল আমিন বর্তমানে ভারত থেকে পাচার হওয়া গরু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূরুঙ্গামারী হাটে নিয়ে যায়। একটি গরু নিয়ে গেলে আড়াইশ টাকা পায় সে। আর এ টাকা দিয়েই কোনো রকমে চলছে তাদের সংসার।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় সাত বছর আগে গরু আনা নেয়ার কাজে নিয়োজিত কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ধলডাঙ্গা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফের গুলিতে। তার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন বড় ছেলে আশরাফুল (২০)।

অভাবী সংসারের হাল ধরতে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনেছিল আশরাফুল। কিস্তিতে অটোরিকশা কেনা কারণে সপ্তাহে তাকে প্রায় ৭ হাজার টাকা কিস্তি শোধ করতে হয়।

কোনো উপায় না পেয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ভারত থেকে গরু আনতে যায় আশরাফুল। সেখানে দক্ষিণ বাঁশঝানি সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ভারতের দীঘলটারী বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে আটক করে। এসময় তাকে নির্যাতনও করেছে বিএসএফ। পরে আহত অবস্থায় তাকে ভারতের হাসপাতালে ভর্তি করে তারা। গত শুক্রবার তার পরিবারের লোকজন জানতে পারে বিএসএফ তাকে আদালতে তুললে তার ৫ বছরের জেল হয়ে যায়। এ খবরে পরিবারের সদস্যরা আরো অসহায় হয়ে পড়ে।

All-amin

আশরাফুলের মা আমেনা বেগম বলেন, পোলাডা টাকার চাপে গেছে। সীমান্তের মধ্যে কি হয়া গেইল। এ্যাহন কী করে এই ছোট বাচ্চাদের পালমু।

বর্তমানে আশরাফুলের মা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩ শতক জমিতে কোনো রকমে তিনটি ঘর তুলে সবাইকে নিয়ে থাকছেন। ছোট বোন আল্পনার বিয়ে দিয়েছিল তিন মাস হয়ে গেল। ছোট দুটি ভাই আল আমিন (৯) ও সুমন (৭)। তারা স্কুলে যায়।
 
আল আমিন জানায়, স্কুলে গিয়া কি করমু। হামারতো পেটত ভাত নাই। মা, নানী, ভাই আর ভাবী কী খাবে। এজন্য গরু নিয়া আহি।

প্রতিবেশি হযরত আলী বলেন, ছেলেটা অটোরিকশা চালাতো। অভাবের সংসারে কিস্তির চাপে গেছে বাড়তি আয় করতে। গিয়ে আটকে গেছে। সে ছাড়া না পেলে বাড়ির লোকজন না খেয়ে মরবে।

শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদ আলী বলেন, আমরা সীমান্তে সীমান্তে লোকজনদের সচেতন করতে সভা সমাবেশ করছি প্রতিনিয়ত। এখানকার সবাই অভাবী। নদী ভাঙন আর চরাঞ্চল এলাকা। সংসার চালাতে তারা গরু আনতে যায়। যদি এখানে সরকারিভাবে গরু পালনের ব্যবস্থা করা যেত। সহজ শর্তে ঋণে যুবকদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে এ ঘটনাগুলো আর ঘটতো না।

তবে বিজিবির ধলডাঙ্গা বিওপির কমান্ডার হাবিলদার আলমগীর হোসেন বলেন, আশরাফুল নামের কাউকে বিএসএফ ধরেছে। এমন খবর আমরা পাইনি। তবে এখন যেহেতু জানা গেল তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।

কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল জাকির হোসেন বলেন, গত ছয় মাস থেকে সীমান্তবাসীকে নিয়ে আমরা বিভিন্ন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে কাজ করছি। কিছু মানুষ তারা লোভে পরে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু নিয়ে আসে। আশরাফুলের বিষয়টি আমাদের জানা নেই তবে আমরা খোঁজ নেব।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।