শ্রীলঙ্কায় গভীর সংকটের কারণ, কারা সাহায্য করছে?
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। জানা গেছে, তীব্র ডলার ঘাটতিতে দেশটির সরকার প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। এদিকে দৈনিক লোডশেডিং বেড়ে ১৩ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া সাধারণ শ্রীলঙ্কানদের জন্য মূল্যস্ফীতি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে। কারণ গত মাসে দেশটির সরকার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। দেশটির এমন পরিস্থিতির কারণ ও কারা এ সংকটে সাহায্য করছে সেটা আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
সমালোচকরা জানিয়েছেন, দেশটির বর্তমান সংকট হঠাৎ তৈরি হয়নি, কয়েক দশকের ভুল সিদ্ধান্তে এমন অবস্থা হয়েছে। বিশেষ করে আগের সরকারগুলোর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে সংকট তৈরি হয়। আর এর মূলে রয়েছে বাজেটে ও সাম্প্রতিক ডলারে ঘাটতি।
২০১৯ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে এই দুই ধরনের ঘাটতির কথা জানায়। এতে দেশটির জাতীয় আয়ের চেয়ে ব্যয় ছাপিয়ে যেতে থাকে।
সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে তার আরও একটি কারণ হলো ডিপ শুল্ক কমিয়ে দেওয়া। যেটি ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় রাজাপাকসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। করোনা মহামারির আগে শুল্ক আইনটি কার্যকর হয়।
দেশটির অর্থনীতিতে প্রথম ধাক্কা আসে করোনা মহামারির পর। এসময় বিশ্বব্যাপী জারি হয় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ হয়ে যায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত। এর সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। কারণ দেশটির আয়ের সিংহভাগ আসে পর্যটনখাত থেকে। একই সঙ্গে কমে যায় রেমিট্যান্সের প্রবাহ। ফলে শ্রীলঙ্কার বৈদেশি রিজার্ভের পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমে যায়।
রাজাপাকসে সরকার ২০২১ সালে রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করে। তারপরে দেশটির চাল উৎপাদন কমে যায়। যদিও পরবর্তীসময়ে সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। এসবের পাশাপাশি ছিল বিশাল অংকের বৈদেশিক ঋণের বোঝা। বিভিন্ন প্রকল্পে চীনসহ দাতা সংস্থাগুলো থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেয় দেশটি।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশটির বিশেষজ্ঞ ও বিরোধী নেতারা ঝুঁকি সত্ত্বেও সরকারকে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি দেশটির সরকার। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর তেলের দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকায় এপ্রিলে দাতা সংস্থাটির শরণাপন্ন হয় রাজাপাকসের প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার আইএমএফের মুখপাত্র জানান, শিগগিরই ঋণের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এদিকে চীন ও ভারতের কাছ থেকেও সহায়তা চেয়েছেন রাজাপাকসে। এরই মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের ফেব্রুয়ারির একটি চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ডিজেল ও চালের চালান শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে। তাছাড়া খাদ্য ও ওষুধ আমদানির জন্যও একশ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে দেশ দুইটির মধ্য। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সরকার ভারতের কাছে আরও একশ কোটি ডলার চেয়েছে।
এদিকে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে এগিয়ে এসেছে চীনও। কয়েকটি চুক্তির আওতায় দেশটিকে প্রায় তিনশ কোটি ডলার দেওয়ার পর আরও আড়াইশ কোটি দেওয়ার কথা ভাবছে চীন।
এমএসএম/এএসএম