পরিণতির জন্য পশ্চিমাদের কেন দায়ী করছেন ইমরান খান?
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আর একদিন পরেই। রোববার (৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত অনাস্থা ভোট। এতে হারলে মেয়াদ শেষ না করেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে তাকে। তবে তার আগে গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান খান দাবি করেছেন, একটি ‘বিদেশি শক্তি’ তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ভাষণে একবার মুখ ফসকে আমেরিকার নাম বলে ফেলেছিলেন ইমরান খান। তিনি বলেন, আমেরিকা-- ওহ, না আমেরিকা নয়, কিন্তু একটি বিদেশি রাষ্ট্র, যার নাম আমি বলতে পারবো না। আমি বলতে চাচ্ছি, এক বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা বার্তা পেয়েছি।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, বিরোধীরা পশ্চিমাদের সঙ্গে মিলে তাকে সরাতে চাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ইমরান খান মূলত পাকিস্তানের জনগণকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে চান।
ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতের মতে, পররাষ্ট্রনীতি জনসম্মুখে নিয়ে আসা বিপজ্জনক হতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর।
ক্ষমতার প্রায় চার বছর পূর্ণ করেছেন ইমরান খান। বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে। ইমরান খানের শাসনামলে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি-বেকারত্বও অনেক বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অনাস্থা ভোটের ফল যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তান আগাম নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে এবং ইমরান খান মনে করছেন, পশ্চিমা-বিরোধী বক্তব্য দিলে আগাম নির্বাচন হলেও তাতে জিতে আবারও ক্ষমতায় যেতে পারবেন।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোশাররফ জায়দির ভাষ্যমতে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্পষ্টতই পরবর্তী নির্বাচনের জন্য পশ্চিমাবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনে হামলা চালায় সেদিনই মস্কো সফরে যান পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকে তিনি নিজেকে ‘পশ্চিমা-বিরোধী’ নেতা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খান সম্ভবত পশ্চিমাদের সমালোচনা করে বেশ কিছু দেশকে অসন্তুষ্ট করেছেন। আমার মনে হয়, এমন বার্তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকেও ক্ষুব্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে পাকিস্তানের বেসামরিক নেতৃত্বের চেয়ে সামরিক জেনারেলদের বেশি ইতিবাচক মনে হয়।
কুগেলম্যানের ধারণা, ইমরান খান যে সংকটে পড়েছেন তা উতরে যেতে সামরিক বাহিনীর সাহায্য আশা করতে পারেন না। কারণ, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ঠিক হওয়ার মতো নয়। সামরিক অন্য কর্মকর্তারাও ইমরানকে নিয়ে খুশি নন বলে জানান এ বিশ্লেষক।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
কেএএ/জেআইএম