হাওরবাসীর প্রিয় ‘হামিদ ভাই’


প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

হাওরের নিভৃত পল্লী কামালপুর থেকে যার যাত্রা শুরু সেই হাওরবাসীর প্রিয় ‘হামিদ ভাই’ এখন দেশের রাষ্ট্রপতি। তবে রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানে আসীন হয়েও তিনি ভুলে যাননি প্রিয় হাওরকে। কামালপুর থেকে বঙ্গভবন। মাঝখানে দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। সাত-সাত বারের এমপি। সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং বর্তমানে দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি।


গহীন হাওরের জলকাদা গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা একজন আবদুল হামিদ। কিশোরগঞ্জের মিটামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে আর পাঁচজন হাওর শিশুর মতোই তার বেড়ে ওঠা। আর কেবলি এগিয়ে যাওয়া। সবচেয়ে কম বয়সে জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন ১৯৭০ সালে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।


রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আবারো তিন দিনের সরকারি সফরে কিশোরগঞ্জ যান গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন দুপুর ২টায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে মিঠামইন যান তিনি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে নিজের বাড়িতে এসেছেন অনেকবার।


তবে স্থানীয়রা বলছেন, কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করলেও এবার মূলত তিনি বাড়িতে কিছুটা সময় কাটানো আর এলাকার মানুষকে দেখতে তাদের সঙ্গে কথা বলতেই হাওরে ছুটে এসেছেন।


মিঠামইন এসেই তিনি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। হেলিপ্যাডে থেকে সোজা চলে যান বড় ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক কলেজ পরিদর্শন করতে। পরে তিনি মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত তমিজা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বেসরকারি ব্যাংক ও কিছুদিন আগে মিঠামইন বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। চিরচেনা কামালপুরে এসেই একই আকুতি। ‘হাওর আমাকে টানে। আমি, বঙ্গভবনে থাকলেও মন পড়ে থাকে আপনাদের মাঝে। নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙ্গে ইচ্ছে করলেও যখন খুশি আপনাদের মাঝে আসতে পারিনা।’


এ সময় রাষ্ট্রপতি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার ইচ্ছে করে বার বার আপনাদের মাঝে ছুটে আসি। কিন্তু পারিনা। বঙ্গভবনে কঠোর প্রহরার মধ্যে থাকি। এখানে এলেও হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরার মধ্যে থাকতে হয়। ইচ্ছে করে বাড়িতে একা একা ঘুমাকে আপনাদের সাথে প্রাণখুলে কথা বলতে।


রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অনেক দিন পর আবারো মিঠামইন এসেছি। ইচ্ছে করলেই বঙ্গভবন থেকে বের হতে পারিনা। এখানে এলেও আপনাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারিনা। আগের মতো যতি বাড়িতে একা একা থাকতে পারতাম, তবে খুব ভালো লাগতো।’ বুধবার দুপুরের কিছু পরে মিঠামইন ডাকবাঙলোর সামনে খোলা জায়গায় বিশ্রাম নেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাত কাটান কামালপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে।


বৃহস্পতিবার সফরের দ্বিতীয় দিনে নদী পথে ঢাকি, ঘাগড়া ও কাটখাল ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে চলমান কালনী-কুশিয়ারা নদী খনন প্রকল্প কাজ পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন, বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব সম্পদ বড়ুয়া, জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফর উল্লাহ, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ। শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি/এসএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।