মেহেরপুরে হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা
এক সময় পাড়া-মহল্লায় আয়োজন করা হতো গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার। যাত্রাপালা দেখার জন্য গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে যেতেন সব বয়সের মানুষ। কিন্তু অশ্লীল নৃত্য, অপসাংস্কৃতি আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রাপালার সেই ঐতিহ্য। যাত্রাপালার সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে মেহেরপুরে হয়ে গেল পাঁচ দিনব্যাপি যাত্রা উৎসব।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে মফিজুর রহমান মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপি যাত্রা উৎসব মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ-সভাপতি প্রভাষক নূরুল আহমেদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানু, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহীনুজ্জামান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, ডা. রমেশ চন্দ্র নাথসহ হাজার হাজার দর্শক উপভোগ করেন।
যাত্রাপালার প্রথম দিনে মঞ্চায়িত হয়েছে যাত্রাপালা দেবী সুলতানা, এর মাধ্যমে সমাজে হিন্দু-মসুলমানদের মধ্যে বিভেদের কারণ, অত্যাচারের বিভিন্ন দৃশ্যসহ যাত্রাপালার শেষ অংশে এসব দ্বন্দ্ব নিরশনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন শিল্পিরা। এছাড়া গাংনীর সীমান্ত নাট্যগোষ্ঠীর স্বামীর চিতা জ্বলছে, প্রান্তীক নাট্যগোষ্ঠীর জেল থেকে বলছি, রায়পুর জাগরণী ক্লাব হাসির হাটে কান্না এবং রাধাকান্তপুর চাষী ক্লাবের পরিবেশনায় যাত্রাপালা অনুসন্ধান মঞ্চায়িত হয়েছে। এই যাত্রাপালার মাধ্যমে সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা ও বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয় তা এই যাত্রাপালার মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তুলেছেন যাত্রা শিল্পিরা।
লোক গবেষক ও মেহেরপুর সহকারি কলেজের সহকারী শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন (ধূমকেতু) জানান, সাংস্কৃতির প্রধান বাহন হিসেবে যাত্রাপালাকে ধরা হয়। কিছু মানুষের কারণে এই যাত্রাপালায় অশ্লীলতা ঢুকে যাওয়ার কারণে এই যাত্রাপালা হারিয়ে গিয়েছিল প্রায় এক যুগ পর আজ আবারো অসংখ্য দর্শক উপভোগ করছে। যাত্রা মরে যায়নি যাত্রা বাঙালির সবার মধ্যে রয়েছে।
যাত্রা দেখতে আসা ফারজানা ইয়াসমিনের মতো আরো অনেক দর্শণার্থী জানান, আমরা পরিবার নিয়ে যাত্রা দেখছি, আগে শুনেছি যাত্রা খারাপ কিন্তু এখন দেখছি যাত্রা এখনো ভালো আছে আমরা এ রকম যাত্রা পরিবার নিয়ে দেখতে চাই। যাত্রা শিল্পী জোসনাসহ আরো অনেক শিল্পী জানান, আগে যে যাত্রা ছিল খুবই ভালো মাঝে এই যাত্রাটা খারাপ হয়ে গেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে যাত্রাপালা দেখতে পারে না। এখন আমরা যাত্রা করছি সমাজকে বোঝানো হচ্ছে যাত্রা কখনো খারাপ হয় না কিছু মানুষ এই যাত্রাকে খারাপ করেছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ও সভাপতি জেলা শিল্পকলা একাডেমি সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, যাত্রার এই সমৃদ্ধিকে ধরে রাখার জন্য আমরা এই আয়োজনটি করেছি। যাত্রা বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। যাত্রার যে আবেদন সেই আবেদন জনগণের মাঝে তুলে ধরার জন্য এই আয়োজন, ভবিষ্যতে এই ধরনের আয়োজন অব্যহত থাকবে।
আতিকুর রহমান টিটু/বিএ