প্লেট দিয়েও চাঁদাবাজি!


প্রকাশিত: ০৪:১৫ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শ্রমিক সংগঠনের নামে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের লাল প্লেট দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চাঁদাবাজ চক্র। রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে তাদের কাছ থেকে লাল প্লেট নিতে বাধ্য করছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের। স্থানীয় চাঁদাবাজরা বিভিন্ন সড়কে লাল জামা পরিহিত লোকদের হাতে লাঠি দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্লেট বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার বিকেলে ফতুল্লা রেলস্টেশনসহ কয়েকটি এলাকার রাস্তায় অবস্থান করে প্লেট বিক্রির দৃশ্য দেখা যায়। আর যারাই প্লেট ক্রয় না করছেন তাদের রিকশার সিট রেখে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চাঁদাবাজ ও লাল জামা পরিহিত লোকজন জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা শ্রমিক নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশের কর্মী দাবি করে প্রতিদিন ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় অবস্থান করে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্লেট নিতে বাধ্য করছেন সাধারণ রিকশা চালকদের।

রিকশা চালকরা জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ও প্যাডেল চালিত রিকশা (ব্যাটারিচালিত) মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ নামে দুইটি সংগঠনের নামে ফতুল্লা, কুতুবপুর, কাশিপুর ও এনায়েতনগর নামে চারটি ইউনিয়ন এলাকায় অন্তত ৭ থেকে ৮ হাজার প্লেট বিক্রি করা হয়েছে। এরমধ্যে অটোরিকশার জন্য প্লেট বিক্রি করেন পাঁচ হাজার টাকায় আর প্লেটের ভাড়া দিতে হয় মাসে ৩শ` টাকা এবং দৈনিক ৩০ টাকা করে দিতে হয় চাঁদা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কে নিয়োজিত চাঁদা আদায়ের কর্মীরা টোকেন দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করছে। এছাড়া প্যাডেল চালিত রিকশার প্লেট বিক্রি করেন এক হাজার টাকায় এবং মাসে প্লেটের ভাড়া একশো টাকা দিতে হয়। এতে করে সরকার প্রতি বছর চারটি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছেন বলে চালকদের অভিযোগ।

রিকশাচালক বশির মিয়া জাগো নিউজকে জানান, লাল প্লেট না নিলে রিকশার চাকা ফতুল্লায় ঘোরে না। লাল প্লেটের লাইগ্যা পলাশ নেতায় লাল গেঞ্জি পড়াইয়া হাতে লাল রঙের লোহার পাইপ দিয়া রাস্তায় দাঁড় করাইয়া রাখে তার লোকজন। একটা একটা কইরা গাড়ি আটকাইয়া সামনে পিছনে দেহে হেগো প্লেট আছে নাকি। আর না থাকলে রিকশার সিট খুইলা নিয়া যায়। টেকা আইননা প্লেট কিননা সিটটা লইয়া যা। বেশি কথা কইলে পাইপের বাড়ি খাইতে হয়।

ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন জাগো নিউজকে জানান, ১৫ বছর পূর্বে পায়ে চালানো রিকশার জন্য আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিন হাজার প্লেট দেয়া হয়েছে। সেগুলো এখন বছরে ৭০ টাকায় প্রতি প্লেট নবায়ন করা হয়। এছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য সরকার থেকে আমাদের কোনো অনুমোদন দেয়নি। কে বা কারা চাঁদা আদায় করা হয় তা জানা নেই বলে স্বপন চেয়ারম্যান জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিকশা মালিকরা বলেন, আমরা আসলে কোন দিকে যাবো? একদিকে সরকার এই অটোরিকশার বিরুদ্ধে। অপরদিকে, শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ অটোরিকশার পক্ষে। আমাদের দাবি সরকারিভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অটোরিকশার বৈধতা দেয়া হলে চাঁদাবাজির হয়রানি থেকে মুক্তি পেতাম।

শ্রমিক লীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশের পক্ষে সংগঠনের পরিচালনকারী আজিজুল হক জাগো নিউজকে জানান, অসহায় দরিদ্র লোকজনের সহযোগিতায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ও প্যাডেল চালিত রিকশা (ব্যাটারিচালিত) মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ নামে আমাদের দু`টি সংগঠন গঠন করে দিয়েছেন কাউছার আহমেদ পালশ। ওই সংগঠনের একজন সদস্য আমি। বিভিন্ন সময় ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে চলাচলে প্রশাসন থেকে বাধা দেয়া হয়।

ওই সময় রিকশাচালকরা আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকি। এছাড়া রিকশা চালাতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনায় আহত-নিহত হন। এক্ষেত্রেও আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করি। এজন্য রিকশা চালকদের কাছ থেকে এককালীন ও মাসে তাদের সামর্থ্য মতো টাকা উঠানো হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

মো. শাহাদাত হোসেন/এমজেডবিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।