ট্রাম্পই ঠিক ছিলেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২২
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় নিজ দেশেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র আজ যেসব সমস্যার মুখোমুখি, সেগুলো সামলাতে হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দরকার ছিল বলে বিশ্বাস করেন তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। এ নিয়ে মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকে বুধবার (১৬ মার্চ) একটি মতামত লিখেছেন ট্রাম্পপুত্র। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য এর বাংলানুবাদ তুলে ধরা হলো-
কেউ কি ধারণা করেছিলেন? ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প সব বিষয়েই সঠিক ছিলেন। গত বছর বাবা যখন তার বই ‘আওয়ার জার্নি টুগেদার’ লেখেন, তখন আমরা দেখতে পাই, তিনি কতটা অর্জন করেছেন এবং যখন সব কিছুর কথা আসে তখন তিনি কতটা সঠিক ছিলেন।
তার নির্বাচনী প্রচারণায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি থেকে শুরু করে হান্টার বাইডেনের ল্যাপটপ সত্য হওয়া, করোনাভাইরাস খুব সম্ভবত চীনের কোনো ল্যাব থেকে আসার বিষয়ে যেখানে মিডিয়াও ভুল করেছিল, সেখানে তিনি সঠিক ছিলেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি আজ আমেরিকার মুখোমুখি হওয়া সব বড় সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে ঠিক ছিলেন। জো বাইডেন যখন রাশিয়া, গ্যাসের দাম, অর্থনীতি এবং বৃহত্তরভাবে বিশ্বমঞ্চে ভুল করছেন, মনে রাখবেন, ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকাকে এবং প্রকৃতপক্ষে গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছিল, হুমকি কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি সংগৃহীত
রাশিয়াকে দিয়ে শুরু করা যাক। ডেমোক্র্যাটরা তার (ট্রাম্প) প্রেসিডেন্সি ধ্বংস করতে কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার ধাপ্পাবাজি টেনে বেড়িয়েছে। এই মিথ্যার স্বরূপ পরে পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর থেকে যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় রাশিয়ার প্রতি কঠোর ছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ভ্লাদিমির পুতিন অন্য দেশ আক্রমণ না করার একটি কারণ রয়েছে- হোয়াইট হাউজে প্রকৃত নেতৃত্ব দেখেছিলেন তিনি।
বর্তমান মার্কিন প্রশাসন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে নারাজ। ট্রাম্প প্রশাসনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা হিসেবে ইউক্রেনে জ্যাভেলিন ও ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছিল, যেখানে প্রেসিডেন্ট ওবামা পাঠিয়েছিলেন কম্বল। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ-ও বুঝতে পেরেছিলেন, ন্যাটোর মতো জোটগুলোকে কার্যকর করতে সবাইকে যার যার ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি অন্য ন্যাটো মিত্রদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে কঠোর পরিশ্রম করেন এবং সফল হন।
এবং তারপরও, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে কোনো অর্থহীন যুদ্ধে জড়াননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শক্তি ও বুদ্ধিমান চুক্তির মাধ্যমেই শান্তি আসে, দুর্বলতা ও অক্ষমতার মাধ্যমে নয়, যা আমরা বাইডেনের কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মানে নিজেদের ইস্যুতে মনোযোগ দেওয়া, বিশ্বের সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা নয়।
ট্রাম্প প্রশাসন তেল-গ্যাসের ক্ষেত্রেও সঠিক ছিল। তারা কিস্টোন পাইপলাইন এবং ডাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনের মাধ্যমে আমেরিকার জ্বালানি স্বনির্ভরতার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের বৃহত্তম তেল-গ্যাস উৎপাদক করে তোলেন এবং আলাস্কাসহ সারা দেশে নতুন ড্রিলিং প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং। ছবি সংগৃহীত
বাইডেন ক্ষমতায় বসার প্রথমদিনই কিস্টোন পাইপলাইন বন্ধ করে দেন। তার জ্বালানি নীতি খুবই ভয়ংকর এবং এটি সরাসরি মূল্যবৃদ্ধির কারণ। আজকের ঐতিহাসিক মূল্যস্ফীতির জন্য তিনিই দায়ী।
ট্রাম্প জো বাইডেনের চেয়ে বিশ্বকে আরও ভালো বোঝেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মতো নেতাদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তা তিনি জানেন। বেইজিংকে নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে বাধ্য করতে তিনি (ট্রাম্প) চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বসাতে ভয় পাননি। ২০২০ সালে সেই চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ট্রাম্প বুঝতে পেরেছিলেন যে, শি জিনপিং বুদ্ধিমান এবং চীনের জন্য সেরাটাই চান, ঠিক যেমনটি তিনি (ট্রাম্প) চান আমেরিকার জন্য। তিনি জানতেন, কীভাবে চীনা নেতার মোকাবিলা করতে হয়, যা জো বাইডেন জানেন না।
বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীন অবশ্যই সেই চুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে দূরে সরে গেছে। কারণ দেশটি জানে, তারা এক দুর্বল প্রেসিডেন্টের মোকাবিলা করছে। ইউক্রেন ইস্যুতে বাইডেনের দুর্বলতাই নিশ্চিত করে দিয়েছে, এরপর তাইওয়ান।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি সংগৃহীত
বলুন তো, মধ্যপ্রাচ্য কীভাবে সামলাতে হয় কে জানেন? এটি নিশ্চিত যে, হোয়াইট হাউজের বর্তমান কোনো ‘কৌতুক অভিনেতা’ নন। সাম্প্রতিক তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের ওপর বিশ্বের নির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু তারা এখন আর আমেরিকার ফোন তোলে না।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প আমাদের ‘দুর্বল’ ইরান চুক্তি থেকে বের করে আনেন এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ড গঠন করেন, যার মাধ্যমে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্যে নতুন জোট তৈরি হয়। কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েল ও তার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশীদের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম শান্তিচুক্তি! আমি কি বলেছি, তিনি আইএস’কেও দমন করেছিলেন?
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি-স্থিতিশীলতা অর্জনে ট্রাম্প যা কিছু করেছিলেন, তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন বাইডেন এবং এই দেশগুলো এখন আমাদের নিয়ে হাসছে। বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও আমাদের উপসাগরীয় মিত্রদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে তৃপ্ত করেছেন এবং গোটা অঞ্চলে নতুন করে অস্থিতিশীলতার বীজ বপন করেছেন। দারুণ করেছেন, জো!
কেএএ/জেআইএম