বোল্টকে চ্যালেঞ্জ ফিলিস্তিনি যুবকের
উসাইন বোল্টকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ফিলিস্তিনের এক যুবক। রিও অলিম্পিকে ‘ট্রিপলের ট্রিপল’ করার স্বপ্ন দেখছেন যখন বিশ্বের দ্রুততম মানব, তখন তাকে কিনা নাম না জানা এক পঁচিশের যুবক হুঁশিয়ারি দিয়ে দিচ্ছেন! কে এই যুবক? তার এমন সাহসই বা হল কী করে?
তিনি মহম্মদ খাতিব। পেশায় যোগ-শিক্ষক৷ তবে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে করেছেন লেখাপড়া; কিন্তু এই খাতিবকে চিনতে হলে এই পরিচয় যথেষ্ট নয়। ফিলিস্তিন আর ইসরাইলের দীর্ঘ দিনের অশান্তি, অত্যাচার, মৃত্যু, বারুদের ঘ্রাণের সাক্ষী খাতিবের শৈশব।
বয়স যখন মাত্র পাঁচ, সেই সময় ইসরাইলের সেনারা বাড়িতে চড়াও হয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালিয়েছিল খাতিবের বাবার ওপর৷ প্রায় প্রতিদিনই সেনারা এসে লন্ডভন্ড করে দিত বাড়ি৷ কী খুঁজছে সেনারা? কেন বারবার একটা ঘরে বাড়ির সবাইকে বন্দী রেখে, অন্যঘরে দাপিয়ে বেড়াত সেনারা? ছোট্ট খাতিব বুঝত না। যখন আরেকটু বড় হল, তখনও একই ছবি। শহরের নানা জায়গায়, ইসরায়েলের সেনাদের ঘাঁটি চোখে পড়ত। রোজই রক্তের দাগ লেগে থাকত সড়কে।
ভয়ঙ্কর সেই শৈশব থেকে মুক্তির ঠিকানা খুঁজত মন। একদিন সুযোগ হল, আমেরিকায় যাওয়ার। পড়াশোনা করতে। সেখানে গিয়েই নজরে আসে লিথুয়ানিয়ার ১৫ বছরের এক সাঁতারুর দিকে। অলিম্পিকে সে যদি পদক জিততে পারে, দেশকে গর্বিত করতে পারে, তা হলে আমি কেন পারব না? এই ভাবনাই বদলে দেয় খতিবের জীবনের গতি৷ অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন আরও একজন। ২০১৩ সালে ফিলিস্তিনি এক গায়ক, যিনি ‘আরব আইডল’ জিতেছিলেন। তার জয়ে গোটা ফিলিস্তিনের মানুষ উৎসব করেছিল।
ব্যস, খাতিব ঠিক করে নেন, এই যুদ্ধ, এই অত্যাচারের আবহ থেকে দেশকে মুক্তি দিতে হলে, তাদের সামনে আনন্দের অন্য ঝাঁপি খুলতে হবে। সেই থেকে শুরু করে দেন অনুশীলন। দৌড়ের অনেক কিছুই তার জানা ছিল না। এক অ্যাথলিটের যা যা দরকার সে সব উপযোগী সরঞ্জামও ছিল না। তাই তো প্রথম দিন দৌড়নোর পর, পরের দু’দিন বিছানা নিতে হয়েছিল খাতিবকে।
এরপরই আলাপ হয় ক্রিস্টাল ডানলপের সঙ্গে। যিনি কোচিং করান। আমেরিকা থেকে ততদিনে ফিলিস্তিনে ফিরে এসেছেন খাতিব। ক্রিস্টাল তাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ট্রেনিংয়ের নানা দিক সম্পর্কে জানাতেন। সেই থেকে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত খাতিব৷ ১০০ মিটার ১৫ সেকেন্ড দৌড়নোর থেকে কমতে কমতে ১১ সেকেন্ড সময়ে ছুটছেন। তবে বোল্টের সময় তার থেকে যে অনেক কম! তাতে কী প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন খাতিব। ‘লোকে ভাবে আমি পাগলের মতো কথা বলছি; কিন্তু আমি লড়ে যাব। বোল্টকে ছাপিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই নামব।’
খাতিবের দেশের ছোট ছোট ছেলেরা ইসরায়েলের সেনাদের পাথর ছুঁড়ে, তাদের মেরে ফেলে দেশকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখে; কিন্তু খাতিব অন্যভাবে মুক্তি দিতে চান। অলিম্পিকের আসরে নিজে পদক জিতে, হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলতে চান, দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে।
আইএইচএস/পিআর