বিশ্বের ‘ভুলে যাওয়া’ সংকটে নজর ফেরাতে ইয়েমেনে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
রুশ আগ্রাসনের মুখে দু’সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন নিয়ে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ কথাবার্তা হচ্ছে, তা অভূতপূর্বই বলা যায়। বিশ্বের প্রতিটি কোণায় প্রতিটি মিডিয়াতে আজ ইউক্রেন সংকটের খবর। অথচ ইয়েমেনে যে সাত বছর ধরে যুদ্ধ চলছে, মানুষ যেন তা ভুলেই গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ’ মানবিক সংকট নিয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এ কারণে বিশ্ববাসীর ‘ভুলে যাওয়া’ এ সংকটে নজর ফেরাতে শান্তির বার্তা নিয়ে ইয়েমেনে গেছেন জনপ্রিয় হলিউড অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।
সোমবার (৭ মার্চ) জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এক টুইটে জানিয়েছে, তাদের বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বিশ্বের ভুলে যাওয়া সংকটের ওপর আলোকপাত করতে ইয়েমেনে রয়েছেন। সেখানে তিনি সাত বছর ধরে চলা সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করছেন।
UNHCR Special Envoy #AngelinaJolie is in Yemen to shine a light on the world's forgotten crisis.
— UNHCR, the UN Refugee Agency (@Refugees) March 7, 2022
She is meeting families affected by a brutal 7 year conflict that has left millions in need of humanitarian assistance. It is important that the people of Yemen are not left behind. pic.twitter.com/jT45sTapu5
এর আগে ইনস্টাগ্রামের এক পোস্টে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলেন, আমি উদ্বাস্তুদের সঙ্গে দেখা করতে ও ইয়েমেনের জনগণের প্রতি আমার সমর্থন দেখাতে এডেনে পৌঁছেছি। জরুরি ভিত্তিতে এখানেও শান্তির প্রয়োজন।
তিনি, এ সপ্তাহে ১০ লাখ মানুষ ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি থেকে আমরা যদি কিছু শিখি, তবে তা হলো- কে সমর্থন পাওয়ার যোগ্য, কার অধিকার রক্ষা করা হবে তা নিয়ে বাছ-বিচার করতে পারি না। সবাই একই সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য। সব জায়গায় সংঘাতের শিকার বেসামরিক মানুষের জীবন সমান মূল্যবান। সাত বছর যুদ্ধের পর ইয়েমেনের জনগণেরও সুরক্ষা, সমর্থন, সর্বোপরি শান্তির প্রয়োজন।
ইয়েমেনের অবস্থা সম্পর্কে জোলি বলেন, এখানকার পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটি। ২০২২ সালে ইয়েমেনে প্রতি ঘণ্টায় একজন বেসামরিক লোক হতাহত হচ্ছেন। যুদ্ধে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, দুই কোটির বেশি ইয়েমেনি নাগরিক বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
ইউএনএইচসিআরের এ বিশেষ দূত জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যতে ইয়েমেন সংকট নিয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে যেতে চান।
View this post on Instagram
২০১৫ সালে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় হুথি বিদ্রোহীরা। এরপর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। ইয়েমেনে হুথি স্থাপনা লক্ষ্য করে তারা নিয়মিত বিমান হামলা চালায়। গত সাত বছরে সৌদি জোট ইয়েমেনে এ ধরনের অন্তত ২৪ হাজার হামলা চালিয়েছে।
জবাবে হুথি বিদ্রোহীরাও সৌদি আরব ও তাদের মিত্র সংযুক্ত আর আমিরাতে প্রায়ই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে ইরান তাদের সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেন যুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং ক্ষুধা ও রোগের মতো পরোক্ষ কারণে অন্তত ৩ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের ৭০ ভাগই ছিল শিশু। এই সংঘাতে ঘরছাড়া হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ধারণা, ইয়েমেনের তিন কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকের ঘরেই পর্যাপ্ত খাবার নেই।
সূত্র: সিবিএস নিউজ
কেএএ/এএসএম