ইউক্রেন যুদ্ধ: যে কারণে তেল নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ০৩ মার্চ ২০২২
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অষ্টম দিনেও অব্যাহত রয়েছে। এতে এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কিয়েভ। লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। এমন হামলায় রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা-বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অপ্রত্যাশিত যুদ্ধে বিশ্ববাজারে লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট।
জানা গেছে, বিশ্ব চাহিদার আট শতাংশ তেল আসে রাশিয়া থেকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা রাশিয়ার বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল ভোক্তাকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল আমদানি করে
যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট পরিমাণ তেল রাশিয়া থেকে রপ্তানি করে। তবে এক্ষেত্রে ওয়াশিংটন মস্কোর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল নয়। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে গড়ে প্রতিদিন দুই লাখ নয় হাজার ব্যারেল ক্রুড তেল আমদানি করে। তাছাড়া প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য দেশটি থেকে আমদানি করে। আমেরিকান ফুয়েল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (এএফপিএম) থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এএফপিএম জানিয়েছে ২০১৯ সালের পর থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি বেড়েছে। কারণ সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাছাড়া গত বছর হ্যারিকেনের প্রভাবে মেক্সিকোর তেলে প্রভাব পড়ে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পরিশোধনকারীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশ থেকে কি পরিমাণ তেল আমদানি করে তার চিত্র
রাশিয়ার তেলের ওপর বিধিনিষেধ কি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব ফেলবে?
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাশিয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে দুই ধরণের সম্ভাব্য পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সউডার স্কুল অব বিজনেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাডাম প্যানক্রেটজ বলেন, প্রথম উত্তরেই বলা যায়, এ সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। যদি কোনো মারাত্মক সমস্যা হয় তাহলে দেশটির রিজার্ভ পেট্রোলিয়াম আছে বলেও জানান তিনি।
কিন্তু বড় পরিসরে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন প্যানক্রেটজ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে তাহলে অন্যদেশগুলোও এক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যা তেলের বাজারে প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ তেলের দাম বাড়তে পারে। ফলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। সর্বপরি মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের এক ব্যারেল তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৩ ডলারে, যা গত সাত বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি ছয় কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়াতে রাজি হয়। জরুরি মজুত থেকে এসব তেল ছাড়ার কথা। এর মধ্যে ফের তেলের দাম বাড়ার খবর এলো।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। টানা কয়েকদিন ধরেই দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলছে। এদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
এমএসএম/জেআইএম